লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর বাঞ্চানগরে হাবিব উল্যাহ ভূঁইয়া বাড়ির নামে পরিচিত মসজিদে দীর্ঘ দিন ধরে নামাজ পড়লেও কেউ জানেন না মসজিদটি নির্মাণের ইতিহাস। স্থানীয়দের কেউ মসজিদটিকে ৬০০ বছরের পুরোনো দাবি করেন, কেউ বলেন ৭০০ বা ৮০০ বছরের পুরোনো। কিন্তু নির্মাণের সঠিক তারিখ-সাল জানা নেই কারো।

মসজিদটির ছাদে বড়-মাঝারি তিনটি গম্বুজ দৃষ্টি কাড়ে মুসল্লি ও স্থানীয়দের। গম্বুজের চূড়া ও সামনের অংশে পাঁচটি কলসি রয়েছে। হাবিব উল্যাহ ভূঁইয়া বাড়ির নামে পরিচিত কয়েকশ বছরের পুরোনো মসজিদটির ইতিহাস অজানা সবার কাছে। মসজিদটি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার উত্তর বাঞ্চানগর পাইকবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত।

স্থানীয় বাসিন্দা ছৈয়দ আহম্মদ, শহিদ ইসলাম ভূঁইয়া, বদিউল আলম, ইদ্রিস মিয়া, ওবায়দুল হক, সাইফুল ইসলাম ও ইমাম হাফেজ মো. মমিন উল্যাসহ কেউ মসজিদ নির্মাণের সঠিক ইতিহাস জানাতে পারেননি।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো মসজিদটি এখনো অক্ষত আছে। গম্বুজগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে গম্বুজের গা ছুঁয়ে পানি পড়ে। মসজিদের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ১ মিটার। নামাজ পড়তে পারেন ইমামসহ ৪১ জন। এখন মুসল্লিরা দুই কাতারে দাঁড়ালেও আগে তিন কাতার হতো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইমামের দাঁড়ানোর স্থানটি (মেহরাব) প্রস্থ স্বাভাবিক হলেও লম্বাতে প্রায় ১ ফুট। ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি থেকে বের হওয়ার তিনটি দরজা রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণে দুটি জানালা আছে। দেয়ালে আছে ফুলের কারুকাজ। মসজিদে একটি পাথরে ফারসি ভাষায় কিছু একটা লেখা আছে, যা পড়তে পারছেন না স্থানীয়দের কেউই।

পাথরের লেখা সম্পর্কে জানতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জুনায়েদ আহমেদ, শাহজাদা ইয়ামিন ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মামুনুর রশিদের সঙ্গে কথা হয়।

তারা জানিয়েছেন, পাথরের লেখাটি ফারসি ভাষায়। এর প্রথম লাইনটি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। দ্বিতীয় লাইন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা.। তৃতীয় লাইনে আছে ‘হাবিবে আল্লাহ আয ফযল ওয়া আনয়াম আও, বেনা করদ আয় মসজিদ আয নামে আও’। যার বাংলা অর্থ এই মসজিদটি নির্মিত হাবিবুল্লাহ নামে আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তার নেয়ামতের বদৌলতে।  চতুর্থ লাইনে লেখা আছে- যে তারিখে হিজরী শহ পেশে দো হাযার আমাদাহ দো ছোয়াদো ছি দো। যার বাংলা অর্থ এই মসজিদটি প্রদর্শিত হওয়ার তারিখ হলো ১২৩২ হিজরি।

পাথরে লেখা শেষ লাইনের অনুবাদ থেকে ধারণা করা হয় হিজরি ১২৩২ সনে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। তবে তাও ধোঁয়াশা। কারণ যার নামে বাড়ি ও মসজিদটি রয়েছে তার অস্তিত্ব খুঁজে পাননি স্থানীয়রা। কবর কোথায় আছে তাও কেউ জানে না। এক সময় এখানে নদী ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পরে চর জাগলে জমিদাররা এ অঞ্চল শাসন করে। মসজিদটিও তৎকালীন সময়ে নির্মিত বলে ধারণা তাদের।

মসজিদটি নিয়ে কথা হয় স্থানীয় পাইকবাড়ির বাসিন্দা পত্রিকার হকার ছৈয়দ আহমেদের সঙ্গে। তার বয়স প্রায় ১১৫ বছর। তিনি লক্ষ্মীপুরের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি।

তিনি বলেন, কত বছর আগে মসজিদটি নির্মাণ হয়েছে, তা কেউ জানে না। আমার বাবা-দাদারাও জানতেন না। তবে হাবিব উল্যাহ ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। পাশের বাড়ির নামও তার নামে। জমির দলিলপত্র ঘেঁটে তা পাওয়া গেছে। এখন মসজিদটি হাবিব উল্যা ভূঁইয়া বাড়ি জামে মসজিদ হিসেবেই পরিচিত।

মসজিদের মুসল্লি ও স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, গ্রীষ্মকালে মসজিদের আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে। আবার শীতের সময় গরম অনুভব হয়।

হাবিব উল্যাহ ভূঁইয়া বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. মমিন উল্যা বলেন, আমার বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। প্রায় ১১ বছর ধরে আমি এখানে ইমামতি করছি। কেউ মসজিদের সঠিক ইতিহাস জানাতে পারেননি। কয়েক বছর আগে মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত করে সামনে সম্প্রসারিত ভবন হয়েছে। ইতিহাস বিজড়িত মসজিদটি অক্ষত রয়েছে। কয়েক বছর পর শুধু রং করা হয়। মসজিদের গম্বুজগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে গম্বুজ চুয়ে পানি পড়ে।

এনটি/আরএআর