কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ ঝুমুর আলী স্ট্রোক করে চার বছর ধরে চলাচল করতে পারেন না। স্ত্রী সুফিয়া বেগম হার্টের রোগী ও মেয়ে কাকলী খাতুন ক্যান্সার আক্রান্ত। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই।  অর্থের অভাবে বাজার করতে পারেন না। চিকিৎসা করাতে পারেন না। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করেন তারা। রমজানে মুড়ি আর পানি দিয়ে ইফতার করেন, শাকসবজি দিয়ে ভাত খেয়ে সেহরি করেন।

ঝুমুর আলী বটতৈল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কবুরহাট মাদরাসাপাড়ার বাসিন্দা।

গত বুধবার (২৭ মার্চ) অর্থের অভাবে তাদের মানবেতর কষ্টের জীবনযাপন নিয়ে ‘পরিবারের তিনজনই অসুস্থ, টাকার অভাবে বাজার করতে পারি না’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয় ঢাকা পোস্টে। সংবাদটি প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন মানুষের নজরে আসে। এরপর থেকে অনেকেই সহযোগিতা করেছেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এতে খুশি হয়েছেন বৃদ্ধ দম্পতি ও তাদের মেয়ে। 

এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরের দিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে লিটিল কেয়ার নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে চাল, মুরগি, দুটি শাড়ি, লুঙ্গি, ছোলা, মুড়ি, সয়াবিন তেল, সেমাই, চিনি, ডাল, আলু, আদা, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। এর আগে বুধবার রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কয়েকজন মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন ব্যক্তি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এসব সহযোগিতা পেয়ে খুশি হয়েছেন বৃদ্ধ দম্পতি।

তাদের সহযোগিতা করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন কয়েকজন বলেন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবনযাপনের একটি নিউজ দেখি। পরে ঢাকা পোস্টের মাধ্যমে অসহায় পরিবারের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করি। ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সাধ্য অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করেছি। এ ধরনের নিউজ প্রকাশ করায় ঢাকা পোস্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা। 

সত্তরোর্ধ্ব ঝুমুর আলী বলেন, আমি স্ট্রোক করে চার বছর ধরে চলাচল করতে পারি না, আয়-উপার্জন করতে পারি না। মেয়েটা ক্যান্সারের রোগী এবং স্ত্রীর কোমরের হাড় চ্যাপ্টা হয়ে গেছে, হার্টের অসুখ। আমরা তিনজনই অসুস্থ। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই।   টাকার অভাবে বাজার করতে পারি না। চিকিৎসা করাতে পারিনা, ওষুধ কিনতে পারি না।  অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হয়। বহুদিন মাছ-মাংসের ঝোল ছুঁতে পারিনি, খেতে পারিনি। বনের শাক দিয়ে ভাত খেয়ে রোজা রাখি। মুড়ি ও পানি দিয়ে ইফতার করি। আমাদের কষ্টের জীবনের কথা ঢাকা পোস্ট প্রকাশ করেছে। এখন অনেকেই সহযোগিতা করছেন। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া থেকে লিটিল কেয়ার নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে চাল, মুরগি, দুটি শাড়ি, লুঙ্গি, ছোলা, মুড়ি, সয়াবিন তেল, সেমাই, চিনি, ডাল, আলু, আদা, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। বহুদিন পর আজ গোশত খাব। আমরা খুব খুশি। 

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও বুধবার রাতে ইউএনও স্যার চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী দিয়ে গেছেন। তারা সরকারিভাবে সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। এছাড়াও অনেকেই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এজন্য ঢাকা পোস্ট ও যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।  

বৃদ্ধ ঝুমুর আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, আমরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছিলাম। অর্থের অভাবে বাজার করতে পারি না, চিকিৎসা করাতে পারি না। আমাদের কষ্টের কথা ঢাকা পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারে মানুষজন। এরপর অনেকেই সহযোগিতা করছেন। ইউএনও স্যার খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন।  লিটিল কেয়ার সংগঠন মুরগি, শাড়ি, লুঙ্গি, চাল, ডাল, সেমাই, চিনিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। বহুদিন পর আজ গোশত খাব। অনেকে টাকা পাঠিয়েছেন, অনেকে বাড়ি এসে সহযোগিতা করেছেন। অনেকে সহযোগিতা করবেন জানিয়েছেন। সবাইকে আল্লাহ ভালো রাখুক। সবার জন্য দোয়া করি। সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

বৃদ্ধ দম্পতির মেয়ে কাকলী খাতুন বলেন, অর্থের অভাবে আমরা খুব কষ্ট করছিলাম। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারতাম না। আমাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসাসহ অনেক কষ্ট। ঢাকা পোস্টে আমাদের কষ্ট নিয়ে নিউজ প্রকাশের পর অনেকেই সহযোগিতা করছেন। একটা সংগঠন বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীসহ শাড়ি, লুঙ্গি, মুরগি, চাল, ডাল, সেমাই কিনে দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। ইউএনও স্যার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়াও কয়েকজন মানবিক মানুষ বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। অনেকেই সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। বহুদিন পরে আজ আমরা মাংস খাব। এখন আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে না। এতে আমরা খুশি। ঢাকা পোস্ট ও যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার জন্য দোয়া রইল। 

রাজু আহমেদ/আরএআর