একদিকে পৌরসভার উচ্ছেদ অভিযান, অন্যদিকে অভিযান শেষ হওয়া মাত্রই পাল্লা দিয়ে ফুটপাত দখলে মরিয়া হয়ে উঠে হকারসহ ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার যানজট নিরসন ও পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে মানিকগঞ্জ পৌরসভা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার কিছুক্ষণ পরই এমন ঘটনা ঘটেছে। 

জেলা শহরের প্রবেশদ্বার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার ৩০ মিনিট পরেই ফের হকাররা ফুটপাত দখল করে বেচা-কেনা শুরু করে। ফলে পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এই অভিযান কতটুকু কার্যত হবে তা নিয়ে সংশয়ে পৌরবাসীসহ সুশীল সমাজ।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মানিকগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও পৌর সুপার মার্কেটের সামনের সড়ক ও ফুটপাত থেকে শতাধিক হকার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জহিরুল আলম, পৌরসভার প্যানেল মেয়র তসলিম মিয়া ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানাসহ থানা পুলিশ ও পৌরসভার কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিকেল ৫টায় অভিযান শেষ হওয়ার পর পরই হকার ও ভাসমান দোকানিরা ফের ফুটপাত দখলে নিয়ে নতুন করে তাদের দোকানপাট বসিয়েছেন। কে কার আগে নিজেদের অবৈধ স্থাপনা পুনঃস্থাপন করবে সেটা নিয়ে চলছে তোড়জোর।
 
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও পৌর সুপার মার্কেটের সামনের সড়ক, হাসপাতাল গেটসহ আশপাশের ফুটপাত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উচ্ছেদ অভিযান শেষ হতেই হকাররা পুনরায় দোকানপাট বসাতে তোড়জোর করছে। কিছু কিছু হকার ভ্যান-ট্রলি নিয়ে নিজেদের ভাসমান দোকান বসিয়ে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বেচাকেনা শুরু করে দিয়েছে। 

বাসস্ট্যান্ড এলাকার হোটেল ব্যবসায়ীরা নিজেদের হোটেলের সামনের ফুটপাতে টেবিল, বড় পাতিলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বসিয়ে ফুটপাত দখল করে ফেলেছে। এতে পথচারীদের যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরাও নিজের অস্থায়ী দোকানপাট বসিয়ে ফুটপাতকে পূর্বের অবস্থায় নিয়ে এসেছে। 

হকাররা জানান, রমজান মাস প্রায় শেষের দিকে। কদিন পরেই ঈদ। রোজায় পরিবারের সদস্যদের খাবার, চিকিৎসা ও পোশাক, বাচ্চাদের পড়ালেখা ও অন্যান্য খরচসহ সব মিলিয়ে প্রচুর খরচ। ঈদে পরিবারের লোকজনকে কিছু হলেও কেনাকাটা করে দিতে হবে। এমন সময়ে তাদের উচ্ছেদ করার ফলে তারা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ফলে পরিবারের দিকে তাকিয়ে বাধ্য হয়ে ফের ফুটপাতে দোকানপাট বসিয়েছেন।
 
হকাররা আরও জানান, তারা কাজ করে খেতে চায়। কিন্ত তাদের জন্য স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ফুটপাতে বসেন। স্থায়ী কাজের সুযোগ বা স্থায়ীভাবে কোথাও ব্যবসা করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধও জানান হকাররা।

জেলা শহরের বাসিন্দা সাইফুল জানান, সকালে দেখলাম পৌরসভা অভিযান চালাচ্ছে। তাতে মনে হয়েছিল আমরা পথচারীরা নিরাপদে যাতায়াত করছে পারবো। কিন্তু সন্ধ্যার আগে বাসস্ট্যান্ডে বাজার করতে এসে দেখি অভিযানের আগে যে অবস্থা ছিল সেই অবস্থা চলে এসেছে। পৌর নাগরিক হিসেবে এমন অভিযান আমরা চাই না, যে অভিযানের কোনো সুফল আমরা পাব না।

সুশীল সমাজের সচেতন নাগরিক গোলাম ছারোয়ার বলেন, পৌর নাগরিক ও পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এবং জেলা শহরে যানজট নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ যে অভিযান পরিচালনা করেছে সেটি খুবই ভালো। তবে অভিযান শেষ হওয়ার পর পরই যদি পুনরায় ফুটপাত হকার-ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায়, তাহলে কর্তৃপক্ষের কাছে আমার প্রশ্ন? এমন অভিযান করে লাভ কি বা পরবর্তী কি ব্যবস্থা নেবে পৌর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র তসলিম মিয়া মুঠোফোনে বলেন, জনস্বার্থে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু অভিযানের পরেই যারা পুনরায় ফুটপাত দখল করে ব্যবসা শুরু করেছে, আমি মনে করি তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। সচেতন না হলে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা খুব দ্রুত আবারও অভিযান পরিচালনা করবো। আজকে প্রায় ২৫টি অবৈধ স্থাপনা ও শতাধিক ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করেছি।

সোহেল হোসেন/এমএএস