চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় তিন সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান আসামি ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। 

আব্দুর রশিদ মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।

জীবননগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) হামলার শিকার একজন সাংবাদিক জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগ শুক্রবার মামলায় রেকর্ড করা হয়। এরপরই মামলার প্রধান আসামি ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এদিকে, শুক্রবার বিকেলে ইউপি মেম্বার আব্দুর রশিদের বাড়িতে পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ ও জীবননগর থানার পুলিশ। তারা ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্ত করেন। এ সময় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদের স্ত্রীর কাছে ইউএনও জানতে চান যে, তার বাড়ির রান্নাঘরে পাওয়া টিসিবির দুই বস্তা চাল কোথায়? উত্তরে তার স্ত্রী বলেন, ওই চাল গরিব মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও হাসিনা মমতাজ বলেন, এ বিষয়ে যদিও অভিযোগটা আমাদের দপ্তরে করা হয়নি, তবুও টিসিবির বিষয়টা আমাদের দপ্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদের বাসায় গিয়েছিলাম সরকারি মালামাল আছে কি না তা দেখার জন্য। সেখানে কিন্তু মালামালগুলো নেই, আমরা কিছু পাইনি। তারপরও আমরা এটি অধিকতর তদন্ত করব। এবং তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। একটা প্রসেসের মধ্যে অলরেডি আছে।

জীবননগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন সাংবাদিকের ওপর হামলায় ঘটনায় মো. মিঠুন মাহমুদ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। পরে সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে মামলার এক নম্বর আসামি আব্দুর রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

তিনি বলেন, প্রতারণামূলক সরকারি চাল আত্মসাৎ করার ঘটনায় আরেকটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এটি আমরা দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঝিনাইদহে প্রেরণ করব। বিষয়টি তারা তদন্ত করবে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়। ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ ভুয়া নামে কার্ড তৈরি করে টিসিবির পণ্য আত্মসাৎ করেছেন বলে খবর পান সাংবাদিকরা।

বিকেলে সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান সাংবাদিক মিঠুন মাহমুদ, আজিজুর রহমান ডাবুল ও তুহিনুজ্জামান তুহিন। এ সময় ইউপি সদস্যের বাড়ির রান্নাঘরে টিসিবির দুই বস্তা চাল ও বেশ কয়েক বোতল তেল পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় ইউপি মেম্বার আব্দুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি গালাগালি শুরু করে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। পরে তার নেতৃত্বে তার ভাই তরিকুল ইসলাম তরি (৪৬), আব্দুর রশিদের ছেলে আমির হামজা অঙ্কন (২৫), মৃত মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে মো. হাসিবুর রহমান সুমনসহ (৩০) অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জন সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান। 

এ সময় সংবাদ সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত ক্যামেরা, মাইক্রোফোন বুম ও মোবাইল ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই মিঠুন মাহমুদ বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরদিন সেটি মামলায় রেকর্ড করা হয়। 

আফজালুল হক/কেএ