অসাধারণ গানের গলা। নেননি কোনো প্রশিক্ষণ, কেবল শুনে শুনে করেছেন রপ্ত। ইসলামী সঙ্গীত গেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জমজ দুই সহোদর মো. হাসান ও মো. হোসাইন।

মো. হাসান ও মো. হোসাইন হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের পূর্ব বড় দেইল গ্রামের অলিমাল হাজীর বাড়ির আবু বকর ছিদ্দিকের ছেলে। দশ ভাই-বোনের মধ্যে জমজ কেবল মো. হাসান ও মো. হোসাইন।

কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া জমজ দুই সহোদর ছোটবেলায় পড়েছেন বুড়িরচর আহম্মদিয়া আলিম মাদরাসায়। তারপর হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স শেষ করেছেন।

জানা যায়, ছোটবেলায় বুড়িরচর আহম্মদিয়া আলিম মাদরাসায় পড়ার সময়ে ২৬ মার্চের একটি দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সহপাঠীর ধাক্কায় আহত হন হাসান। তারপর দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তখন প্রতিজ্ঞা করেছেন আর কখনো ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন না। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এরপর থেকে সকল প্রতিযোগিতায় তারা প্রথম ও দ্বিতীয় হতেন। বর্তমানে বাবার সঙ্গে নিয়মিত কৃষি কাজ করেন তারা। নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট না থাকলেও অন্যরা তাদের গান ফেসবুকে ছাড়েন। এতে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে তাদের ভিডিও। 

বাবার সঙ্গে দুই জমজ ভাই। ছবি : ঢাকা পোস্ট

মো. হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবা-মাসহ ১২ সদস্যের কৃষক পরিবারে আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া অনেক কষ্টের ছিল। দুই ভাই এক বই দিয়ে পড়াশোনা করেছি। সারারাত ধানের কাজ করে সকালে পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের জীবনে কোনো পরীক্ষায় ফেইল নেই। ছোটবেলার দৌড় প্রতিযোগিতায় আহত হওয়ার পর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমরা শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকব। তাই শুনে শুনে গান রপ্ত করেছি। আমাদের কোনো প্রশিক্ষক নেই। আমাদের গজল শুনে মানুষ আনন্দ পায় এটাই আমাদের আনন্দ।

মো. হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেসবুকে আমাদের কোনো গজল আমরা ছাড়িনি। মানুষ আমাদের গান শুনে, পছন্দ করে তাই আমরা গান গাই। সেখান থেকেই মানুষ গান গুলো ছাড়ে। তবে আমাদের কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। আগামী দিনে যদি মানুষের ভালোবাসা পাই তাহলে আমরা আরও দূরে যেতে চাই। 

মো. হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা জীবনে যত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি তাতে আমি প্রথম হয়েছি বা আমার ভাই হোসাইন প্রথম হয়েছে। তবে এসবে আমাদের সংসার চলে না। কৃষক বাবাকে সহযোগিতা না করলে আমাদের পেটে ভাত জুটে না। তাই আমরা দিনশেষে কৃষি কাজ করি। আমরা মানুষকে গজল, গান শুনিয়ে আনন্দ দিয়ে থাকি। তবে এসব আনন্দ ক্ষণিকের। তাই আমরা ভালো কিছু করতে চাই।  মানুষের দোয়া চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন,  দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মানুষ খুব পরিশ্রমী। জমজ দুই ভাই হাসান-হোসাইন অত্যন্ত পরিশ্রমী ও কর্মঠ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে তারা সুনাম কুড়িয়েছে। কিন্তু তাদের মেধা ও প্রতিভা বিকাশের জায়গা পাচ্ছেনা। কোনো সুযোগ পেলে নিঃসন্দেহে তারা ভালো করত।

হাসান-হোসাইনের চাচা কবির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। কৃষি কাজের পাশাপাশি তারা পড়াশোনা চালিয়ে নিয়েছে। এই অঞ্চলে তাদের মতো নম্র ভদ্র সন্তান আর কেউ নেই। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি। তারা যেন সফল হতে পারে। 

হাসান-হোসাইনের বাবা আবু বকর ছিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার জমজ দুই ছেলে ইসলামি গান, কুরআন তিলাওয়াত করে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছে। এগুলো দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। একটা অনিশ্চিত জীবন যাপন করছে। একটা চাকরি বাকরি হলে তাদের জন্য ভালো হতো। তাহলে এই সংস্কৃতি চর্চা তারা চালিয়ে যেতে পারত। আমি কৃষক মানুষ তাই তাদের দিয়ে কৃষি কাজ করাই। এর থেকে বেশি কিছু করার আমার সুযোগ নাই।

বুড়িরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জমজ দুই ভাই মেধাবী এবং পরিশ্রমী। তারা খুব ভালো গান গায়। তারা যে এতো ভদ্র এটা আমার ভালো লাগে। আমি প্রায় আট বছর ধরে তাদের গান শুনি। সময় পেলে তাদের নিয়ে জমিনে বসে গান শুনি। হাতিয়ায় কোনো প্রতিযোগিতা হলে তারা ফার্স্ট হয়। সরকারি বা বেসরকারিভাবে তাদের জন্য কিছু করা গেলে ভালো হতো। আমি তাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব।

হাসিব আল আমিন/এএএ