পঞ্চগড়ে ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার অভিযোগে তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড় জেলা শহরে স্যামসাং শো রুমের তৃতীয় তলায় বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি নামের একটি সংগঠনের কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। ওই সময় সংগঠনটির আরও কয়েকজন পালিয়ে যান বলে জানা যায়।

আটককৃতরা হলেন, মফিজুল ইসলাম (৫২), আমিনুল ইসলাম ও সাদেকুল ইসলাম। মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা শহরে স্যামসাং শো রুমের তৃতীয় তলার বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি নামের একটি কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। ওই সময় সংগঠনটির আরও কয়েকজন পালিয়ে গেছে বলে জানা যায়।

জানা যায়, বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি নামে সংগঠনটি পঞ্চগড় ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় কার্যালয় খুলে ভুয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবসায়ীদের থেকে জরিমানার নামে অর্থ আত্মসাৎ করে থাকে। আটককৃত মফিজুল ইসলাম এই সংগঠনের পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি ও জেলার বোদা উপজেলার আমতলা কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। আমিনুল ইসলাম একই সংগঠনের সহসভাপতি ও জেলার সদর ইউনিয়নের ঝাকুয়াকালি এলাকার বাসিন্দা। সাদেকুল ইসলাম ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা শহরের মসজিদপাড়া এলাকা বাড়ি তাদের। এ তিনজনের মধ্যে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা পালন করতেন আমিনুল ইসলাম।

বেশ অনেকদিন ধরে এই সংগঠনের ১০ জন সদস্য বিভিন্ন স্থানে নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে  ব্যবসায়ীদের থেকে জরিমানা আদায় করে আসছিলেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষের দোকানে অভিযান চালিয়ে তারা হাতিয়ে নিতেন অর্থ। গতকাল সোমবার তাদের অভিযানের পর জরিমানা করা একটি রশিদ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সে রশিদে দেখা যায়, তাদের জেলা কার্যালয় জেলা শহরের স্যামসাং শো রুম ভবনের তৃতীয় তলায়। এ অফিস থেকেই তারা কার্যক্রম চালাতেন। মঙ্গলবার দুপুরে মাইক্রোবাস নিয়ে একই কায়দায় অভিযানে প্রস্তুতি নেয়ার সময় তাদের ৩ জনকে আটক করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী। পরে তিনি জেলা সদর থানা পুলিশের কাছে অভিযুক্তদের হস্তান্তর করেন।

আরও জানা যায়, বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি নামের এই ভুয়া সংগঠনটির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার। আর পঞ্চগড় জেলা কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, সহ-সভাপতি লুপনা আক্তার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া পায়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক সোলেমান আলী, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম, আইন বিষয়ক সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাজিদা আক্তার ও জেসমিন আক্তার। এই সংগঠনটির সদস্যরা সোমবার পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকার ১০টি প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানার টাকা হাতিয়ে নেন।

এই সংগঠনের ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জরিমানা দেন জেলা সদরের সাতমেরা বাজারের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, একটি মাইক্রোবাসে করে ৪ জন আমাদের বাজারে এসে নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে জানায় তাদের ২ লাখ টাকা জরিমানা করার ক্ষমতা রয়েছে। সেখান থেকে তারা প্রথমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে চায়। পরে দুই হাজার টাকা জরিমানা করে টাকা নিয়ে দ্রুত চলে যায়। পরে বিষয়টি সন্দেহ হলে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি এরা প্রতারক। তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। 

তবে আটক হওয়া বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি ও মফিজুল ইসলাম বলেন, সংগঠনটিতে আমাদের নতুন কমিটি হয়েছে। আমরা প্র্যাক্টিস করছিলাম। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ছোট ছোট জরিমানা করেছি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের বলেছেন যে আমরা ছোটখাটো জরিমানা করতে পারব। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী সাংবাদিকদের বলেন, এটা প্রতারক চক্র। চক্রটি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করে আসছিল। এরা শুধু পঞ্চগড়ে নয়, অন্য জেলাতেও এ ধরনের কাজ করেছে।

তাদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কোনো সম্পর্ক নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ছাড়া পরিচালনা হয় না। তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরাই মামলা করছে। এখানে যেন তাদের কোনো কার্যালয় না থাকে সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ্য করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে। এছাড়া এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এসকে দোয়েল/আরকে