মাঠ জুড়ে দুলছে সোনালী গম। এ বছর গমের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পঞ্চগড়ের চাষিরা। এদিকে কৃষিতে প্রযুক্তির কল্যাণে সহজ হয়েছে কৃষি আবাদ, শ্রমিক সংকটও লাঘব হয়েছে। কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে গম কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। প্রযুক্তিরকল্যাণে অল্প সময়ে শ্রমিক ছাড়াই ক্ষেত থেকে গম কাটতে ও মাড়াই করতে পারায় খরচ বেঁচে যাচ্ছে তাদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ২০ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর। ইতোমধ্যে চাষিরা ক্ষেত থেকে গম কাটতে শুরু করেছেন। জেলার ৫টি উপজেলায় এবার বারি ৩০ ও ৩৩  জাতের গম বেশি চাষাবাদ হয়েছে। বাংলাদেশ গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত গমের জাত ১, ২ ও ৩  উৎপাদন ও ফলন ভালো হয়েছে। তবে বারি ৩৩ জাতের গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা মনে করছেন, বারি ৩৩ জাত গম প্রতি একরে ৪০ থেকে ৪৫ মণ করে ফসল পাওয়া যাবে।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকাল থেকে জেলার সদর ও তেঁতুলিয়ার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের একরের একর জমির সোনালী দানার গম কাটা হচ্ছে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে। একই সঙ্গে এ মেশিনেই গম মাড়াইয়ের পর গম বস্তায় ভরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কম খরচে স্বল্প সময়ে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই মাঠ থেকে সহজেই গম ঘরে তুলতে পেরে সস্তিতে চাষিরা।

হারভেস্টার মেশিনের গম মাড়াই নিয়ে চাষিরা বলছেন, অনেক উপকার হয়েছে হারভেস্টার মেশিন আসায়। ১৫ মিনিটে গম কাটা ও মাড়াই করে পরিস্কার গম ঘরে তুলতে পারছেন তারা। গম কাটার এই মেশিন আসায় তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। এতে গম উৎপাদনে খরচও কম হচ্ছে এবং কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সঠিক সময়ে গম ঘরে তুলতে পেরে খুশি তারা।  

চাষিরা আরও জানান, এক বিঘা জমির গম কাটতে ও মাড়াই করতে ৩০০০-৩৫০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতো। শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। এখন শ্রমিক ছাড়াই কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে মাত্র ১০-১৫ মিনিটে এক বিঘা জমির গম কাটা ও মাড়াই করতে সহজ হয়ে গেছে। খরচও কম লাগছে। সরকার ৫০ শতাংশ ভুর্তুকি দিয়ে কৃষকদের কৃষি আবাদ ও ফসল উৎপাদনে এই কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়েছেন।

তেঁতুলিয়া উপজেলার সদরের মাগুড়া গ্রামের গম চাষি আব্দুল লতিফ বলেন, আমি ১ একর জমিতে ১৫ জাতের গম চাষাবাদ করেছি। আবহাওয়া ভালো হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। এই ১ একর জমিতে গম চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ গম ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে খরচ বাদ দিয়ে খুবই কম লাভ থাকবে বলে জানান তিনি।

একই উপজেলার সর্দারপাড়ার গ্রামের জামাল উদ্দিন ও পাশারুল বলেন, দুই একর জমিতে গম আবাদ করা হয়েছে। আবাদ ভালো হয়েছে। তবে শিস চিকন থাকায় উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। আরেকদিকে গম চাষ করে তেমন লাভ নাই। কারণ দামী ওষুধ, কামলা ও হাল চাষ খরচে বর্তমানে বাজারে খুব একটা লাভবান হতে পারব না। তবে বাজারে দাম বেশি গেলে লাভবান হতে পারব।

তিরনইহাট হাট ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের হাছেন আলী বলেন, আমি দেড় একর জমিতে গম চাষ করেছি। আবাদ ভালো হলেও বাজারে গমের দাম কম। দেড় একর জমিতে ৫০ মণ গম পেতে পারি। কিন্তু বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এতে করে দেড় একর জমিতে গম আবাদে খরচ হয়েছে ৪২ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে বাজারে এখন গম বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা মণ। তাহলে ৫০ মণ গম বিক্রি করলে খরচ বাদ কিভাবে লাভ হবে বুঝতে পারছি না। একদিকে সুবিধা হয়েছে হারভেস্টার মেশিনে গম মাড়াই করতে পেরে। এটা না হলে কামলা খরচ করে লোকসানই পড়তে হতো। একই কথা বলেন স্থানীয় কৃষক আশরাফুল, দুলু মিয়া ও মমিরুল হক।

মজিবর নামের একজন কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন চালক বলেন, আমরা এ মেশিন দিয়ে কৃষকদের গম মাড়াই করে দিচ্ছি। প্রতি একর গম মাড়াইয়ে আমরা খরচ নিচ্ছি ৫৫০০-৬০০০ হাজার টাকা। কৃষকদের একটা সুবিধা হয়েছে, তারা মেশিনের মাধ্যমে গম মাড়াইয়ে তাদের তেমন শ্রমিক খরচ লাগবে না। গমের দাম কম থাকার কারণে আমরাও তেমন লাভবান হতে পারছি না।

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, চলতি মৌসুমে পঞ্চগড়ে ১৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা এখন গম কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আশা করছি কৃষকরা এ বছর গমের ভালো দাম পাবেন। 

এসকে দোয়েল/আরকে