নেত্রকোণা সদর উপজেলার চল্লিশাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুজিবুর রহমান। বয়স ৬৩ বছর। ৩৪ বছর ধরে মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলার পারলা মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদে। শত কষ্টের মাঝেও ছেড়ে দেননি মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব। ৫০ টাকা বেতনে শুরু করে ৩৪ বছরে এখন তার বেতন বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার টাকা। বেতনের সঙ্গে বছরে একটা ঈদ বোনাস পান তিনি। 

শুধু মুজিবুর রহমান নয়, জেলার অধিকাংশ মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের অবস্থা একই। সামান্য বেতনে কোনো রকমে সংসার চলছে তাদের। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন তারা। জেলার বেশ কিছু মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। 

মুয়াজ্জিন মুজিবুর রহমানের দুই ছেলে এবং তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মোট ১০ জনের সংসার। তার বড় ছেলে আনোয়ার কামাল শারীরিক প্রতিবন্ধী, এক চোখে দেখতে পান না। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে চারজনের সংসার। যতটুকু পারেন রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে সংসারে সহযোগিতা করেন। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা কামালের। ছোট ছেলে মোস্তফা কামাল গাছ থেকে পড়ে গিয়ে শারীরিক অসুস্থতার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন। তারও স্ত্রী-সন্তানসহ চারজনের পরিবার। মুজিবুর পাকিস্তান আমলে শ্যামগঞ্জ আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি অভাবের তাড়নায়। বাধ্য হয়ে ছেড়ে দেন পড়াশোনা। নেমে পড়েন সংসারযুদ্ধে।

তিন হাজার টাকা বেতনে কীভাবে চলেন জানতে চাইলে মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মসজিদ থেকে যে হাদিয়া পাই, সেটা মাসের ১০ তারিখেই শেষ হইয়া যায়। দুই ছেলে টুকটাক কাজ করলে কিছু টাকা দিয়া সহযোগিতা করে। বাকি দিনগুলা কোনো রকম টানাটানি করে পার করি। আমার মনে হয় না দুই বছরের মধ্যে আমি গরুর গোশত কিনছি। ব্রয়লার মুরগিও মাসে বা দুই মাসে নেওয়ার সুযোগ হয়।

তিনি আরও বলেন, চার নাতি আছে আমার। তারা মাঝে মাঝে বায়না ধরে চকলেট-আইসক্রিম খাওয়ার জন্য। কিন্তু তাদের তো কইতে পারি না যে পকেটে টাকা নাই। একটা চা খাওয়ার টাকা নাই, আইসক্রিম দিমু ক্যামনে? আল্লাহ চালায় বলেই চলতে পারি, নাইলে এই বেতনে কি চলা সম্ভব? আমি খাইলেও খুশি না খাইলেও খুশি, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আল্লাহ যেমনে নিতাছে এমনেই আমার দিন যাইতেছে কোনো মতে।

মুজিবুর রহমান বলেন, এই যে রোজা চলতেছে ২০-২২ দিন হইলো এর মধ্যে এক বেলা যে গরুর মাংস অথবা মুরগির মাংস নিয়ে বাড়িতে দিব এই ক্ষমতা আমার নাই। যেমন আছি এতেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। 

একই মসজিদের ইমাম হিসেবে আছেন হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম। হাফেজি শেষ করে এখন পড়াশোনা করছেন কওমি মাদরাসায়। তার বাড়িও নেত্রকোণা সদরের চল্লিশাপাড়া গ্রামে। দুই ভাই, এক বোন ও বাবা-মা নিয়ে পাঁচজনের সংসার তার।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘরে বাবা অসুস্থ থাকায় পুরো পরিবার তার ওপরেই নির্ভরশীল। ছোট ভাই টুকটাক টিউশনি করে যা উপার্জন করে তা দিয়ে পরিবারে একটু সহযোগিতা করার চেষ্ঠা করে। মসজিদ থেকে যে পরিমাণ সম্মানি দেওয়া হয় সেটা দিয়া সংসার চালনো খুবই কষ্টকর।

তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী যারা আছেন তারা ভালো বেতন-ভাতা পান। কিন্তু আমাদের খোঁজ-খবর কেউ নেয় না। তিন হাজার টাকা দিয়ে কী হয়? বেতনটা নিয়া বাজারে যাই, এক সপ্তাহের বাজার করি হাত খালি হয়ে যায়। বছরে ঈদে একটা পাঞ্জাবি বানাই। বর্তমানে একটা পাঞ্জাবি বানাতে লাগে প্রায় ২ হাজার টাকা, বাকি ১০০০ টাকা দিয়া কি ঈদ পার করতে পারমু? এখানে ইমামতির পাশাপাশি দুই-একটা টিউশনি করাই। সেখান থেকে অল্প কিছু টাকা আসে, এগুলো দিয়ে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতেছি। তারপরও যা পাই, সেটা নিয়েই আলহামদুলিল্লাহ বলি। 

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, নেত্রকোণা জেলায় মসজিদের সংখ্যা ৫ হাজার ২০০। জেলার ১০টি উপজেলায় ১১টি মডেল মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি উদ্বোধন হয়েছে, বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। প্রত্যেক মডেল মসজিদে রয়েছেন একজন ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন ও দুইজন খাদেম। ইমাম বেতন পান ১৫ হাজার টাকা, মুয়াজ্জিন পান ১০ হাজার টাকা ও খাদেমরা প্রত্যেকে পাচ্ছেন আট হাজার করে। তবে বেসরকারি মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা সামান্য বেতনে চাকরি করেন। গ্রামের মসজিদগুলোতে এই বেতন আরও সামান্য।  

নেত্রকোণা সদরের চল্লিশা ইউনিয়নের সুকুয়া গ্রামের সুকুয়া বাইতুল ইজ্জা জামে মসজিদের ইমাম মো. আশরাফুল ইসলাম। তার বাড়ি সদরের লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের ওয়াইলপাড়া গ্রামে। পাঁচ ভাই, বাবা-মা, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ১০ জনের সংসার তার। সবাই বাড়িতে থাকলেও পেশার খাতিরে তিনি থাকেন সুকুয়া গ্রামে। সাভারের আল জামিয়াতুল মাদানিয়া মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) শেষ করে এখানে ইমাম হিসেবে আছেন। বেতন পান আড়াই হাজার টাকা। 

সুযোগ-সুবিধা কেমন পান জানতে চাইলে আশরাফুল ইসলাম বলেন, যে বেতনভাতা পাই সেটা দিয়ে জীবনযাপন করাটা খুবই দুরুহ ব্যাপার। দ্রব্যমূল্যের যা দাম তার সঙ্গে বেতন কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ না। আবার সন্তান মোটামুটি সারা বছর অসুস্থ থাকে। প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা তার চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়। অনেক সময় বাচ্চা বিভিন্ন আবদার করে কিন্তু ওইগুলো পূরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। 

এই মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. দুলু মিয়া। তার বাড়িও নেত্রকোণার চল্লিশা ইউনিয়নের সুকুয়া গ্রামে। স্ত্রী, এক সন্তান ও দুই নাতি নিয়ে পাঁচজনের সংসার। কেমন আছেন জানতে চাইলে বলেন, খুব কষ্টে দিন যাইতেছে। চাল আর অন্যান্য জিনিসের যা দাম, আড়াই হাজার টাকা বেতন দিয়া বাজার কেমনে করি? বাড়ি থেকে বাজার আনতে বললে সবগুলো আনতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, আমার এক মেয়ে তার দুই সন্তান নিয়ে আমাদের সঙ্গেই থাকে। একজনের নাম জান্নাতুল, বয়স ১০ বছর। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। আরেকজনের নাম জুবায়েদ, বয়স ৫ বছর। তাদের ভরণপোষণও আমারই করা লাগে। আমি নিজেই অসুস্থ, সারামাস ওষুধ খাইতে হয়। ঋণ কইরা ও টুকটাক কাজ কইরা কোনো রকম দিন পার করতেছি।
 
চল্লিশাপাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন। তার বাড়ি চল্লিশা ইউনিয়নের চল্লিশা গ্রামে। পারলা মদিনাতুল উলুম মাদরাসা থেকে কোরআনে হাফেজ হয়েছেন তিনি। বাড়িতে মা-বাবা ও ছোট ভাইকে নিয়ে চারজনের সংসার।

পরিবারের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে যদি বলি তাহলে কষ্টেই থাকি। এই টাকা দিয়া কোনো ভাবেই চালানো যায় না। মসজিদ থেকে পাই আড়াই হাজার টাকা। ধরেন মা একটা জিনিস চাইয়া বলল, বাবা এইডা আইনা দে। নিজেই চলতে পারি না মায়ের ইচ্ছা পূরণ করি ক্যামনে?  বাজারের কথা বইলা লাভ নাই। এ হাদিয়া দিয়া ১০ দিন চলতেই কষ্ট হয়ে যায়। টাকা শেষ হলে বন্ধু-আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার-কর্য করে চলি। আমি মাদরাসায় পড়াশোনা করি সেখানে লজিং থাকায় ওখানেই খাওয়া-দাওয়া করায় খরচটা কম। কিন্তু আমার জায়গায় অন্য আরেকজনের চলাটা খুব কষ্টকর হবে। তবুও এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণ একটাই, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং সওয়াবের আশা।

মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন। তিনি নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার গাবুরগাছ গ্রামের বাসিন্দা। নেত্রকোণা সদরে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। স্বামী-স্ত্রী, দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে নিয়ে ছয়জনের পরিবার। বড় ছেলে কোরআনের হাফেজ হয়েছেন। অন্যজন হাফেজি পড়া করেছে। মেয়েরা এখনো ছোট। তিনি পারলা আকন্দ বাড়ি জামে মসজিদে ইমাম হিসেবে নিয়োজিত আছেন। 

পেশা হিসেবে ইমামতি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করাই একমাত্র লক্ষ্য। এ ছাড়াও কোরআন শিক্ষা ও মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে মানুষের মাঝে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

জিয়া উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন,  মসজিদ থেকে যে ৬ হাজার টাকা সম্মানি দেওয়া হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। বর্তমান যে বাজারের অবস্থা এতে করে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের নিয়মিত বাজার করে খাওয়াটা কষ্ট হয়ে যায়। আবার আমার সন্তানদের পড়াশোনার জন্য ৩-৪ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখতে হয়। এখানে ইমামতির পাশাপাশি একটা মাদরাসা পরিচালনা করি, এভাবেই চলে যাচ্ছে। আমাদের যে দুঃখ-কষ্ট, এটা আসলে অনেকেই বুঝে না। সবার প্রতি অনুরোধ, যে যেখানে যে অবস্থায় আছেন সেখান থেকে আল্লাহর ঘরের দিকে একটু নজর দেবেন। আপনারা একটু নজর দিলে একটু ভালো থাকতে পারব আমরা।

আকন্দ বাড়ি জামে মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে আছেন মো. খায়রুল ইসলাম। দুই সন্তান ও স্বামী-স্ত্রী মিলে চারজনের সংসার। চার বছরের মেয়ে মহিলা মাদরাসায় প্লে শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। ছোট মেয়ের বয়স মাত্র দেড় মাস। কোরআনের হাফেজ হয়ে যুক্ত হয়েছেন মুয়াজ্জিন পেশায়।

মসজিদের বেতনে কি সংসার চালাতে পারেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আল্লাহর ঘর মসজিদের খেদমত করার বিনিময়ে যে টাকা সম্মানি পাই এটা দিয়ে চলে না। এটার পাশাপাশি কয়েকটা টিউশনি করি। মসজিদ থেকে ছয় হাজার পাই, আর টিউশনির টাকা মিলিয়ে কোনো রকমে দিন চলে যাচ্ছে।

খায়রুল আরও বলেন, কয়দিন আগেই নতুন অতিথি ঘর আলোকিত করে এসেছে। আবার কদিন পরেই আসছে ঈদ। সেখানেও খরচের ব্যাপার আছে। সব মিলিয়ে একটা চাপ যাচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। 

নেত্রকোণা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের নিজামপুর জামে মসজিদের ইমাম তোফায়েল বেগ। বাড়ি  সদরের কালিয়ারা গাবরাগাতী ইউনিয়নে। পরিবারে রয়েছেন মোট ১১ জন সদস্য। যৌথ পরিবার হওয়ায় তিনি বাজার খরচের জন্য পরিবারের হাতে তুলে দেন বেতনের পুরো ৫ হাজার টাকা।

কিছুটা কষ্ট নিয়েই তিনি বলেন, আমার পরিবারে বাজার করতে প্রতি মাসে আনুমানিক ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এখানে সন্মানি পাই ৫ হাজার টাকা। আমি বড় ছেলে হয়েও সংসারে ৫ হাজারের বেশি দিতে পারি না। ছোট দুই ভাই কলেজে পড়াশোনা করে, তাদের পেছনে মাসে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। খরচ চালানোর জন্য অবসর সময়ে বাইরে কোরআন শিক্ষা দেই।

তিনি বলেন, আমার হয়তো পরিবারে বাবার একটু সাপোর্ট আছে। তাই আমি কোনো রকম চলতে পারছি। কিন্তু যাদের অন্য কোনো সুযোগ নেই, তারা এই টাকা দিয়ে কীভাবে চলে বর্তমান সময়ে?

আকন্দবাড়ি জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আবুল হাশিম বলেন, আসলে আমাদের এখানে পাশাপাশি মসজিদের সংখ্যা অনেক বেশি। মূলত মসজিদ কমিটির ইনকামের মাধ্যম কম, এজন্য আমরা চাইলেও তাদের ভালো সুযোগ-সুবিধা দিতে পারি না। উনারা আসলেই খুব কষ্টে জীবন-যাপন করেন। তাদের একটু সুযোগ-সুবিধা যদি বাড়িয়ে দেওয়া যেত তাহলে তারা উপকৃত হতো। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সুযোগ-সুবিধা বেড়ায় দিতে। পাশাপাশি সরকার যদি তাদের একটু জীবন মান উন্নয়নের দিকে নজর দিত ভালো হতো।

মোহাম্মাদিয়া জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর খান বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি বছর বেতন বৃদ্ধি পায়, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু ইমাম মুয়াজ্জিনদের দেখার কেউ নাই। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতার জন্য প্রতিবছর বাজেট বরাদ্দ হয়, কিন্তু ইমাম মুয়াজ্জিনদের কোনো বাজেট বরাদ্দ হয় না। ইমাম মোয়াজ্জিনদের যে দুর্দশা এটার দিকে সরকার কোনো নজরে দেয় না। অনেকে লাখ টাকা বেতন পাইলেও তাদের জীবন চলে না। কিন্তু একটা মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিন তিন-চার হাজার টাকা বেতন দিয়া দিন পার করে দিচ্ছেন। আল্লাহর ওপর ভরসা করেই তাদের চলছে।

নেত্রকোণা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লি এইচ আর খান পাঠান সাকি বলেন, সারা বাংলাদেশেই ইমাম-মোয়াজ্জিনরা যে বেতন ভাতা পান, সেটা পর্যাপ্ত না। কিছু মসজিদ আছে যেগুলোতে হয়তো পর্যাপ্ত সম্মানি দেওয়া হয়। বিশেষ করে গ্রামের মসজিদগুলোতে একটু দৃষ্টি দেওয়া দরকার। তারা যে বেতন ভাতা পান সেটা দিয়ে কোনোভাবেই চলা সম্ভব না। উনারা খুব মানবেতার জীবনযাপন করেন। সরকারিভাবে যদি তাদের একটু সাহায্য করা যায়, তাহলে হয়তো তারা একটু উপকৃত হবে।

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জীবনমান উন্নয়নের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে নেত্রকোণা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক শফিকুর রহমান সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করেছেন। ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা ইমাম-মোয়াজ্জিনদের কল্যাণের জন্য কিছু কাজ করে থাকি। যেমন, কেউ যদি মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন তাহলে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হয়। যদি হঠাৎ কেউ মৃত্যুবরণ করেন তাহলে তার দাফন-কাফনের জন্য পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। কোনো অসচ্ছল ইমাম-মুয়াজ্জিনের মেধাবী সন্তান থাকলে তাদের পড়াশোনার জন্য সহযোগিতা করা হয়।

এর বাইরেও উদ্যোক্তাদের বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয়। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ১৫-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। এই সহযোগিতা পেতে হলে তাদের অবশ্যই ইমাম-মোয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য হতে হবে। সদস্য হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা চাঁদা দিয়ে আবেদন করতে হবে।

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থিক অসচ্ছলতা দূরীকরণে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে নেত্রকোণা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, আর্থিকভাবে অসচ্ছল ইমাম-মুয়াজ্জিন যারা আছেন তাদের জন্য ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। তাদের যদি ট্রাস্টে রেজিস্ট্রেশন করা থাকে তাহলে নির্দিষ্ট ফরমে আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে তাদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকি।

আরএআর