নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, এর আগেও তো ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানকে আটকে দিয়েছি। জীবিত অবস্থায়ই তাকে আটকে দিয়েছি। সুতরাং রাতের বেলা তার ম্যুরাল ভাঙার প্রশ্ন আসে না। জিয়ার ম্যুরাল ভাঙতে চাইলে বহু আগেই ভাঙতাম। ওরা (বিএনপি) এটা করে একটা ইস্যু তৈরি করতে চায়, যেন এখানে মঞ্চটি না হয়।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

শামীম ওসমান বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলেই ওরা দায়ী করে। কারণ ১৬ জুন আমাকে বোমা মেরে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। এরাই ক্ষমতায় আসার পর বায়তুল আমানে গুলি করা হয়েছে। তারা নাকি ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জনগণ ও আমি তাদের আল্টিমেটামের শক্তি দেখতে চাই। ওরা খুব নোংরা ও অশ্লীল কথা বলেছে। এ সকল অশ্লীল কথা বলে আমার লোকজনকে ফোন করার আগেই তারা বলল ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বললে সেন্ট্রালে আমাদের দাম বাড়ে। ভাই মানে আমি শামীম ওসমান। আমার বিরুদ্ধে কথা বলে বড় নেতা হতে পারলে হোক। আমার আপত্তি নেই। 

তিনি বলেন, আমরা বলেছি এখানে একটি মঞ্চ হবে। এখানে ১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সকল ইতিহাস ধারণ করা হবে। এখানে বিএনপিরও গর্ববোধ করা উচিত। কারণ তাদের পূর্বপুরুষরাও এখানে অবদান রেখেছেন। জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল তো থাকারই কথা না। পঞ্চম সংশোধনিতে সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউর রহমানের শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করে। ২০১৪ সালেই এটা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজউক এটাকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ কারণেই এটা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২ তারিখে আমাদের মিটিং ঘোষণা করা হয়েছে। ৪ তারিখে মিটিং হবে, সেখানে এটা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ৩ তারিখ কেন ভাঙতে যাব। 

শামীম ওসমান বলেন, ওরা (বিএনপি) হয়তো এটাকে ভেঙেছে অথবা ভেঙে পড়েছে। ওরা এটা নিয়ে ইস্যু তৈরি করতে চায়। ওরা চায় না এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত হোক। আমি তাদের বলতে চাই আপনারা পারবেন না। আমাদের কর্তব্য স্মৃতি রক্ষা করা। এখানে কেউ বাধা দিলে আমরা তাদের প্রতিহত করব, মানুষ প্রতিহত করবে। এর আগেও কিছু এক্সট্রিম বামপন্থী এটা নিয়ে কথা বলেছিল। আমি এখানে বসে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছি। তারা আর কোনো কথা বলেনি। এখানে জামায়াত, ডান বা বাম নেই। এরা একটা গ্রুপ। ওরা নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে চায়।

তিনি বলেন, এ ধরনের অশান্তির রাজনীতি করার চেষ্টা যারা করেন তাদের বলতে চাই অন্য এলাকায় গিয়ে এ সকল কাজ করুন। নারায়ণগঞ্জের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের বলেছেন, যারা জ্বালাও পোড়াও করেছে তাদের চিহ্নিত করতে। আমরা তা করিনি, চেয়েছি যে তারা শোধরাক। এমন কিছু করবেন না যেন নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে ওঠে। এ কাজটা হলে নারায়ণগঞ্জে একটা খোলামেলা জায়গা হবে। বাচ্চারা শহীদ মিনারের চিপায় বসে থাকে। সেখানে তারা বসতে পারবে, গিয়ে ইতিহাস জানতে পারবে সেখানে। আমরা আশা করি এ কাজটি দ্রুত করা হবে। আমার দুই নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেব ও ওবায়দুল মোক্তাদির সাহেব। তারা বলেছেন দ্রুত এ কাজটা করো। আমি আশা করি আগামী ১৫ আগস্ট এ মঞ্চ আমরা ওপেনিং করব। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের নিয়েই এটা ওপেনিং করব।

শামীম ওসমান বলেন, আমি ১৯৬৬ সালের ইত্তেফাক পত্রিকার কাটিং নিয়ে এসেছি। যেন পরবর্তী প্রজন্ম এটা জানে। আমি সংসদে ভাষণে বলেছিলাম নারায়ণগঞ্জের টাউন হল স্বাধীনতার স্তম্ভ। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন আমার বাবা। ২০১৪ সালে এটা পরিত্যক্ত করা হয়েছে। সব জায়গায় এটার নাম টাউন হল। আমি সেই টাউন হল কমিটির একজন সদস্য। ২০১৪ সালেই এটা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেখানে কী করা হবে এটা নিয়ে নানান মানুষ নানান মতামত দিয়েছিল।

প্রশাসনের ভেতরেও ভূত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অতি আওয়ামী প্রশাসনের কারণে গত ১০ বছরেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস বদলে দেওয়া হচ্ছিল। এগুলো দেখার পর আমরা সোচ্চার হই, এই বইগুলো কালেক্ট করি। আমি সংসদে ভাষণ দেওয়ার পরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত দেওয়ার পর আমরা যদি আমাদের অতীত প্রজন্মকে মূল্যায়ন না করি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের মূল্যায়ন করবে না। আমি বলেছিলাল এখানে ছয় দফা মঞ্চ করা হোক। এটা জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব। জেলা প্রশাসকরা দীর্ঘদিন দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক এটা নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

শিপন/আরএআর