মেঘনা নদীর লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌ-পথ দেশের ২১টি জেলার সহজ যোগাযোগ মাধ্যম। এ রুটে লঞ্চযোগে প্রতিদিন হাজারো যাত্রীর যাতায়াত রয়েছে। ফেরিতে লক্ষ্মীপুর-ভোলা প্রতিদিন দুই শতাধিক যানবাহন আশা যাওয়া করে। এরমধ্যে অধিকাংশই যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন। তবে শুষ্ক মৌসুমে এ রুটে ডুবোচরের কারণে লঞ্চ ও ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বর্তমানে এ ডুবোচর লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এতে বড় লঞ্চ নদী থেকে মজুচৌধুরীর হাট ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। ঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে নদীর মুখে বড় লঞ্চ দাঁড়িয়ে থাকে। আর ছোট লঞ্চ ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে বড় লঞ্চে স্থানান্তর করে। 

এমনটিই জানিয়েছেন মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক সুপার ভাইজার শরিফুল ইসলাম ও সি-ট্রাকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা (চার্টার) বশিরুল ইসলাম। ঈদকে সামনে রেখে নদী ও রহমতখালী খালে সৃষ্ট ডুবোচরের কারণে মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাটে ভিড়তে পারে না বড় লঞ্চ। এটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, রহমতখালী চ্যানেলে গভীরতা না থাকায় লঞ্চসহ বড় নৌ-যান সহজে চলাচল করতে পারছে না। এতে প্রতি ঈদ মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে ঘাট পরিচালনা করছে ইজারাদারসহ রাজনৈতিক নেতারা। প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 

এমভি পারিজাত লঞ্চের মাস্টার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ভাটার সময় লঞ্চ বন্ধ রাখতে হয়। মাঝেমধ্যে ভাটা পড়লে রহমতখালী চ্যানেলের মাঝখানে লঞ্চ আটকে যায়। তখন জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় অপচয় হয়। রহমতখালীর গভীরতা না বাড়লে লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই ঘাটটিকে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

মজুচৌধুরীর হাটের সি-ট্রাকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা (চাটার) বশিরুল ইসলাম বলেন, রহমতখালী চ্যানেলে পানি থাকে না। ভাটার সময় বসে থাকতে হয়। এ সময়টা কাজে লাগায় নিষিদ্ধ স্পিডবোট এবং ট্রলার পরিচালকরা। তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী পারাপার করে। ফলে আমরা যাত্রী পাচ্ছি না।  

মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক সুপার ভাইজার শরিফুল ইসলাম বলেন, এ রুটে কয়েকটি বড় লঞ্চ রয়েছে। ডুবোচরের কারণে নদী থেকে ঘাট পর্যন্ত বড় লঞ্চ আসতে পারে না। এতে ঘাট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে খালের সংযোগ স্থানে নদীতে বড় লঞ্চ দাঁড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে ছোট লঞ্চের (স্টিমার) মাধ্যমে যাত্রী স্থানান্তর করা হয়। ঈদকে সামনে রেখে এটি বড় ধরনের দুর্ভোগ। 

লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীর হাটের নৌ-পুলিশের ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নদীতে ছোট নৌ-যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যারা এগুলো পরিচালনা করে, তাদেরকে নিষেধ করেছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ছোট নৌ-যানে যাত্রী পারাপার করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত নৌ-রুটকে বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নদী উত্তাল থাকায় ওই সময়টাতে ছোট আকারের নৌ-যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

মজুচৌধুরীর হাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. কাউছার বলেন, খাল ও নদীতে ডুবোচর রয়েছে। পানির গভীরতা কম। এজন্য ৪টি ফেরিতে ৮০-৯০টি গাড়ির বেশি পারাপার করা সম্ভব হচ্ছে না। ভাটার সময় রহমতখালী চ্যানেলে ফেরি বন্ধ রাখতে হয়। জোয়ার আসলে চলাচল স্বাভাবিক থাকে। নাব্যতা সংকট না থাকলে দ্বিগুণ যানবাহন পারাপারে সুযোগ ছিল। এ রুটে ফেরি কৃষাণী, কাবেরী, কুসুমকলী ও সুফিয়া কামাল চলমান রয়েছে। কনকচাঁপা নামে আরেকটি ফেরি আপাতত মেরামতে আছে। 

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে এ রুটের জন্য মজুচৌধুরীর হাট থেকে লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল জাতীয় সড়ক প্রশস্তকরণ করা হয়। কিন্তু নদী থেকে রহমতখালী খাল চ্যানেলে নাব্যতা সংকট কাটেনি। নাব্যতা সংকট দূর করতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর ঢাকা-লক্ষ্মীপুর নৌ পথের ড্রেজিং উদ্বোধন করা হয়। ড্রেজিং কাজ শেষ হলেও নাব্যতা সংকট থেকেই গেছে। ড্রেজিংয়ের বালু ঘাট এলাকায় খালের মাঝখানে স্তুপ করা হয়। ওই স্তুপকৃত বালু ফের খালে পড়ে। 

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএএস