ময়মনসিংহ নগরীতে লোডশেডিং কম হলেও উপজেলাগুলোতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা তীব্র। ২৪ ঘণ্টায় ৮-১০ ঘণ্টার বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে। সকাল-দুপুর তো বটেই, মধ্যরাতেও লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে ইফতার, তারাবি আর সেহরির সময় লোডশেডিং অবর্ণনীয় কষ্ট দিচ্ছে।

সারাদিন রোজা থাকার পর তীব্র লোডশেডিংয়ের সঙ্গে অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন বাসিন্দারা। অনেকে এই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রমও। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, চাহিদার তুলনায় প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি থাকায় দিতে হচ্ছে লোডশেডিং। গরমের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাস ও ঈদের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম ইউনিয়নের বাসিন্দা সোলাইমান হোসেন বলেন, সকাল থেকে রাত, এমন কোনো সময় নেই যে লোডশেডিং হয় না। একে তো তীব্র গরম, তার ওপর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করতে পারছে না। বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। গরম ঠিকভাবে আসার আগেই যদি এখনই এই অবস্থা হয় তাহলে কয়েকদিন পর কি হবে এটাই ভাবছি।

কান্দানিয়া বাজারের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর গোলাপ বলেন, ঈদুল ফিতরের আর বেশি দিন বাকি নেই। ইফতারের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন দোকানেই বেচাবিক্রি জমে ওঠে। কিন্তু বিদ্যুতের ভেলকিবাজির কারণে দিনে-রাতে লোডশেডিং হচ্ছে। এতে সবাই ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

জেলার শিল্পাঞ্চলখ্যাত ভালুকায়ও রোজার মাসে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এতে অতিষ্ঠ জনতা গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় পিডিবি অফিস ঘেরাও করে। পরে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার আশ্বাসে তারা অফিস চত্বর ছেড়ে আসে। কিন্তু তার পরও থেমে নেই লোডশেডিং, এখনো আগের মতোই ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।

ভালুকার পূর্বাশা কম্পোজিটের এমডি আলী হোসেন বলেন, দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না, যার কারণে ব্যয়বহুল ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে কারখানা চালিয়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

পাঁচগাঁও গ্রামের জালাল উদ্দিন বলেন, আমার আট একর বোরো জমিতে মোটরে সেচ দিতে হয়। সেচ মৌসুমে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও গড়ে দুই ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না।

ভালুকা পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী এ জে এম আনোয়ারুজ্জামান জানান, তার এলাকায় বিদ্যুৎ চাহিদা ২২ মেগাওয়াট, কিন্তু পাচ্ছেন গড়ে ১০ থেকে ১৫ মেগাওয়াট। ফলে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

একই অবস্থা ত্রিশাল, ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুরসহ অন্যান্য উপজেলার সকল এলাকাতেই। বয়স্ক মানুষজন গরমে ঘরের ভেতর টিকতে না পেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন কিছুটা ঠান্ডা জায়গা কিংবা গাছতলায়। ত্রিশালের ধানীখোলা দক্ষিণ ভাটিপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব নজরুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, একদিকে যেমন রোদের তীব্রতা, তার ওপর ঘন ঘন লোডশেডিং আমাদের সহ্যসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকলে এই গরমে ঘরে থাকা যায় না। তাই গাছতলায় বসে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখি না।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ময়মনসিংহ নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল হক জানান, জেলায় ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করতে পারছি প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট। প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকার ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

উবায়দুল হক/এএএ