‘ভাঙা ঘর ছিল, এখন দালান করতেসি। ঘরের কাজ শেষ হলে ছেলে জাহাজ থেকে এলে তাকে বিয়ে করাব, তার জন্য পাত্রী দেখতেছি। আজ ছেলের খবর নাই। সেই ছেলে জিম্মি। ঈদে আমায় ফোন দিত। কেনাকাটার টাকা দিত। ছেলে অপহৃত কীভাবে যে দিন কাটাচ্ছি আমরা জানি। আমাদের কোনো ঈদ নাই। রাজু হইলো আমার ঈদ। ঠিকমতো রান্নাও হয়নি।’

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজে এবি (অ্যাবল সি ম্যান) হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ আনারুল হক রাজুর (২৯) মা দৌলত আরা বেগম।

অপহৃত মোহাম্মদ আনারুল হক রাজু নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের (আজিজুল হক মাস্টারের বাড়ি) আজিজুল হক মাস্টার ও দৌলত আরা বেগমের ছেলে। তিনি অবিবাহিত। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। 

রাজু বামনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর বামনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। চট্টগ্রামের ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (এনএমআই) থেকে সিডিসি কোর্চ সম্পন্ন করেন। 

জানা যায়, রাজুর পরিবারে নেই ঈদের আমেজ। ঈদকে ঘিরে তাদের পরিবারে হয়নি কোনো ধরনের কেনাকাটা। নেই ভালো কিছু রান্নার প্রস্তুতিও। অন্যান্য বারের ঈদগুলো খুশির থাকলেও এবার ঈদ তাদের কাছে নীরব কান্নার। একই সঙ্গে রয়েছে শঙ্কা ও প্রতীক্ষা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির বন্দিদশায় মহাসাগরে তলিয়ে গেছে তাদের ঈদ আনন্দ।

রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজু বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছিল। গত নভেম্বরের শেষ দিকে রাজু সিঙ্গাপুর থেকে জাহাজে ওঠে। এরপর ছেলের বন্দিদশায় বদলে গেছে পরিবারের চিত্র। ঈদের কেনাকাটাও হয়নি, ভালো রান্নাও হয়নি। আমি দাবি জানাচ্ছি আমার সন্তানসহ সকল নাবিকের মুক্তির ব্যবস্থা যেন সরকার দ্রুত করে। 

রাজুর মা দৌলত আরা বেগম বলেন, আমরা খুবই কষ্টে দিন অতিবাহিত করছি। ছেলে ছাড়া আমাদের কোনো ঈদ আনন্দ নেই। প্রধানমন্ত্রী যেন আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে ছাড়িয়ে আনে, সেই অনুরোধ করছি।

রাজুর বড় ভাই জিয়াউল হক রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদেরকে জাহাজের একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়েছে। বুধবার ইফতারের পর সে হোয়াটস অ্যাপে আমাকে কল করেছে। তারা সেখানে তীব্র পানি ও খাদ্য সংকটে আছে। বয়লার করা ২টি দুম্বা দিয়েছে দস্যুরা। আমার ভাই সবার জন্য দোয়া চেয়েছে, আপনারা আমার ভাইসহ জিম্মি সবার জন্য দোয়া করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সন্তানকে ছাড়া বাবা-মায়ের ঈদ কষ্টে যাবে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভালো রান্না বা ঈদের কেনাকাটা কিছুই হওয়ার কথাও নয়। সব মিলিয়ে পরিবারটির কাছে ঈদ আনন্দ ফিকে হওয়ার কথা। রাজুর পরিবারে জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকার সহায়তা পাওয়ার সুযোগ আছে। এ বিষয়ে আমি সহযোগিতা করব। এছাড়াও যে কোনো প্রয়োজনে পরিবারটির পাশে উপজেলা প্রশাসন ছিল, আছে এবং থাকবে।

হাসিব আল আমিন/আরএআর