সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমাদের দেশে এখন প্রায় ৩শ নদী আছে। আমাদের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদী আছে। এই নদীর স্রোতের মতই আমাদের সংস্কৃতি তীব্র গতিতে বহমান। যে যত অপচেষ্টাই করুক না কেন, তাকে আটকাবার সাধ্য কারো নেই।

শুক্রবার (১২ এপ্রিল) রাতে চাঁদপুর প্রেস ক্লাব সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর তীরে মাসব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আজকে আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কো ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। তার মধ্যে দিয়ে আমাদের লোক সংস্কৃতিকে বিশ্ব অঙ্গনে আমরা উপস্থাপন করতে পেরেছি। আজকে আমাদের রিকশা আর্ট ইউনেস্কো ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজের অংশ হয়েছে। তার মধ্য দিয়ে আমাদের একেবারে লোকজ শিল্প, মাটি থেকে উঠে আসা শিল্প মাধ্যম সেটি আজকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপিত হয়েছে। আমাদের নকশী কাঁথা, জামদানি, শীতলপাটি এরকম আরো অনেক কিছু আছে। এসব কিছুই আমাদের সংস্কৃতি ও বাঙালি জীবনের অনুসঙ্গ। এগুলোকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের মা, মাটি ও নদী যেমন আমাদের কাছে সত্য, তেমনি এইসব অনুসঙ্গগুলো আমাদের কাছে সত্য। কাজেই যারা আমাদের ইতিহাসের, সত্যের, স্বাধীনতার, মুক্তির ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তাদের রুখে দিতে হবে। আর তার জন্য সবচাইতে বড় হবে আমাদের সংস্কৃতি। কাজেই আমাদের এই মুহূর্তে প্রয়োজন সাংস্কৃতিক জাগরণ। আমি বিশ্বাস করি চাঁদপুরের এই মাসব্যাপী বাঙালির সংস্কৃতিক উৎসব সেই পুনঃজাগরণে আরো অনেকদূর এগিয়ে নেবে আমাদের এই চাঁদপুরের মানুষকে।

দীপু মনি বলেন, আমরা বাঙালি। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। আমাদের সংস্কৃতি যার একটি বড় সমৃদ্ধি আছে। আমাদের সাহিত্যের বিশাল একটি সমৃদ্ধের ভান্ডার আছে। আমাদের ভাষা হচ্ছে জীবন্ত একটি ভাষা এবং গতিশীল। চলার পথে কত রকমের ভাষা থেকে আমরা পছন্দে শব্দ নিয়ে নিয়েছি। হাজার হাজার শব্দ। আমরা ফার্সি, আরবি, পূর্তগীজ, জাপানি, চীনা অনেক ভাষা থেকে শব্দ নিয়েছি। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে যুক্ত হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা বাঙালি এবং বাংলায় আমাদের জন্ম। বাংলার ভূ-প্রকৃতি এমন নদী বিধৌত শ্যামল বাংলার মানুষ। আমাদের মননে ও হৃদয়ে সব জায়গায় একটি ছাপ খুব স্পষ্ট। আমাদের ইতিহাসের প্রায় পুরোটা সময়ই পরাধীন ছিলাম। কিন্তু আমরা স্বাধীন হতে চেয়েছি। বার বার চেয়েছি, বার বার সংগ্রাম করেছি এবং রক্ত দিয়েছি। কিন্তু আমরা কখনো স্বাধীন হতে পারিনি। তার পর এক সময় আমরা একজন নেতাকে পেয়েছি। তিনি হলেন টুঙ্গিপাড়া থেকে আসা সুঠাম দেহের অধিকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার দীর্ঘ সংগ্রাম ও নেতৃত্বে আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান গণি পাটওয়ারী, পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, চাঁদপুর প্রেস ক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশাসহ অনেকে। 

প্রধান অতিথি বক্তব্য শেষে ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দীপু মনি। মাসব্যাপী এই বাঙালি সাংস্কৃতিক উৎসব বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে চাঁদপুর প্রেস ক্লাব এবং পৃষ্টপোষকতায় রয়েছে চাঁদপুর পৌরসভা।

আনোয়ারুল হক/পিএইচ