বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখে চাহিদা থাকলেও বরিশালের বাজারে তেমন ইলিশ মিলছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তার দামে গলদঘর্ম অবস্থা ক্রেতাদের। কয়েকদিনের ব্যবধানে দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। শনিবার (১২ এপ্রিল) বরিশাল পোর্ট রোড, নতুন বাজার, বাংলা বাজার, রূপাতলী বাজার, নথুল্লাবাদ, কাশিপুর ও তালতলি মাছ বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

শুধু তাই নয় নগরী লাগোয়া উপজেলা শহরের মধ্যে বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ ও বানারীপাড়ার বাজারগুলো এবং বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পাইকারি মাছের আড়ত পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে একই তথ্য জানা গেছে।

পোর্ট রোডের ব্যবসায়ী রুবেল হাওলাদার বলেন, চৈত্রের শেষ সময়ে মোকামে কোনো ইলিশের ট্রলার আসছে না। যা আসছে তা জাটকা। বাজারে ইলিশ না আসায় দামও চড়া। আমরা জেলেদের কাছ থেকে কিনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। সুতরাং বেশি দামে কিনতেহেলে বেশি দামেই বিক্রি করি। তবে ইলিশ আসলে দাম এত থাকতো না।

এসব বাজারে দামের খুব তারতম্য দেখা যায়নি। নতুন বাজারের ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন বলেন, এক কেজি ওজনের ইলিশ এখন পাওয়া যাচ্ছে না। ৭০০-৮০০ গ্রামের মাছই এবারের বৈশাখের বড় ইলিশ।

তিনি জানান, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১১৫০-১৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন। আধা কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকায়। এছাড়া জাটকা প্রতি কেজি বিক্রি করছেন সাড়ে ৫০০-৬৫০ টাকায়।

বাবুগঞ্জের মীরগঞ্জের জেলে ইয়াকুব আলী বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ইলিশ কম পাওয়া গেছে। আগে বৈশাখ শুরুর আগেই চৈত্র মাসে ঝড়-বৃষ্টি হতো। তাতে উজান ঠেলে ইলিশের ঝাঁক নদীতে উঠে আসতো। কিন্তু এবার ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় ইলিশ আসেনি। জালে যা উঠছে সবই প্রায় জাটকা। তাছাড়া সবখানে আমরা জালও ফেলতে পারছি না।

পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আরেক ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, পয়লা বৈশাখ ঘিরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণে ৩০-৩৫ হাজার টাকা দাম বেড়েছে। অভয়াশ্রমগুলোতে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাঙ্ক্ষিত ইলিশ বাজারে আসছে না। 

তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখে ক্রেতা চাহিদা বেড়ে যায়। এবার অনেক চাহিদা থাকলেও মাছ নিয়ে ট্রলার আসছে না।

আকবর আলী জানান, প্রতি মণ ইলিশের দাম দেড় থেকে দ্বিগুণ বেড়েছে। আগে যে মাছ ৬০-৬৫ হাজার টাকা মণ ছিল তা ১০ দিনের ব্যবধানে এক লাখ টাকা হয়েছে। একেবারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়েছে।

বাকেরগঞ্জের বাজারে মাছ কিনতে আসা পবিত্র হালদার বলেন, পয়লা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়ার রেওয়াজ আমরা পারিবারকিভাবেই ধরে রেখেছি। দাম বেশি হলেও বাজারে কিনতে এসে হতাশ হয়েছি। ইলিশের নামে যা বিক্রি হচ্ছে তা জাটকা। আমাদের এবারকার পয়লা বৈশাখের আয়োজন ইলিশ ছাড়া পানসে হয়ে যাবে।

বরিশাল নগরীর কাশিপুর বাজারে ইলিশ মাছ খুঁজছিলেন কলেজ শিক্ষক জোবায়ের হোসেন। তিনি বলেন, ইলিশ না খেলে যে উৎসব হবে না তেমন নয়। তবে আমাদের বর্ষবরণের দারুন অনুসঙ্গ ইলিশ। কিন্তু নানান কারণে এবার পাওয়া যাচ্ছে না। আসলে ইলিশের বিকল্প কিছু নেই দেখে অন্য কিছুর চেষ্টাও করা যাচ্ছে না। কিছু জাটকা কিনেছি। তাতেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবো।

তিনি বলেন, এক কেজি সাইজের ইলিশ আড়াই হাজার টাকা দামে বিক্রি হতে দেখেছি। আর দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩ হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মূলত বাজার মনিটরিং না থাকায় এমন অস্বাভাবিক দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।

পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মনির হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে আশানুরুপ ইলিশ পাওয়া যাবে। মহিপুর মৎস্য বন্দরে নিষেধাজ্ঞা ছাড়া কয়েক হাজার মণ ইলিশ আসে। এখন দেড় থেকে ২০০ মণ আসে।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, বাজারে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তবে তা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। প্রতি কেজি ইলিশের দাম প্রায় দ্বিগুন-তিনগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন মোকামে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ১ কেজি সাইজের ইলিশ প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে এক লাখ টাকায়। নিষেধাজ্ঞায় কিছুটা প্রভাব থাকলেও আরও অনেক কারণে দাম বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে দাম কেন বাড়ছে তা বাজার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সঠিক বলতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী জেলার ইলিশ অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর