সোমালিয়ার জলদস্যুদের মুক্তিপণ দিয়ে জিম্মি ২৩ নাবিক ও এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ মুক্ত করা হয়েছে। সোমালিয়া উপকূল থেকে মুক্ত হয়ে জাহাজটি আরব আমিরাতের দিকে রওনা হয়েছে। নাবিকদের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়ার খবরে তাদের পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে। 

জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী খুলনার মো. তৌফিকুল ইসলামের পরিবারেও আনন্দের জোয়ার বইছে। রোববার (১৪ এপ্রিল) ভোরে ফোন করে মুক্ত হওয়ার বিষয়টি পরিবারকে নিজেই জানিয়েছেন তৌফিক। এরপরই পরিবারের আনন্দের বন্য বইছে, খুশিতে আত্মহারা তারা। দুপুরে আনন্দের এই সংবাদ গণমাধ্যমে জানাতে গিয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলেন তৌফিকের মা দিল আফরোজ।

তৌফিকের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত প্রায় ১ মাস ২ দিন তারা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তাদের সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। এখন অপেক্ষায় রয়েছেন তৌফিকের ফেরার। তারা সরকার এবং জাহাজ মালিকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

বাড়ি থেকে গত ২৫ নভেম্বর জাহাজে গিয়েছিলেন মো. তৌফিকুল ইসলাম। তিনি খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ২০/১ করিমনগর এলাকার মো. ইকবাল এবং দিল আফরোজ দম্পতির ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।

তৌফিকের মা দিল আফরোজ বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এবং মালিকপক্ষের কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ। এতো তাড়াতাড়ি তারা কাজ করে আমাদের ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসছে। আমাদের তো আনন্দের শেষ নেই। এই বলেই বাকরুদ্ধ হয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলেন তিনি।

তৌফিকের স্ত্রী জোবাইদা নোমান বলেন, আজ সকাল সাড়ে ৫টার পর ফোনে কথা হয়েছে। বলেছে- ‘চিন্তা করো না, আলহামদুলিল্লাহ আমরা মুক্তি পেয়েছি।’ তারা এখন ব্যস্ত রয়েছে, বেশি কথা হয়নি। শুধু জানালো- ‘ভালো আছে, দোয়া করো। আমরা আরও সুরক্ষিত স্থানে গিয়ে কথা বলবো।’ তারা দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। সেখানে পৌঁছে রওনা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। 

মুক্ত হওয়ার খবরে কেমন লাগছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। একটা মাস আমাদের ওপর যা গিয়েছে। এই অবস্থা থেকে আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। সরকার ও জাহাজ মালিকপক্ষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জোবাইদা।

তৌফিকুল ইসলামের মেজো ভাই খালেদুল ইসলাম খালেদ বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমত এবং সকলের দোয়া ছিল। সরকার ও মালিকপক্ষের প্রচেষ্টায় আমার ভাই মুক্ত হয়েছে। আমরা সকলের কাছে চির কৃতজ্ঞ। এখন আমরা তার ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি। এই কয়দিন খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম, এখন স্বস্তিতে আছি। ভোরে যখন সংবাদটি শুনি তখন দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। আমরা এখন আনন্দিত, খুশি।

প্রকৌশলী তৌফিকের শ্যালক শিববিন মাহমুদ বলেন, আমরা এতটাই আনন্দিত যে ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। গত ৩১ দিন যতটা দুঃখে কেটেছিল, এখন ততটাই আনন্দিত। সকলের কাছে চির কৃতজ্ঞ, দেশবাসী আমাদের জন্য দোয়া করেছে। একটা মাস প্রতিক্ষার পর এই আনন্দটা ঈদের আনন্দের মতোই।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এরপর তারা মুক্তিপণ দাবি করে। দীর্ঘ এক মাস পর মুক্তিপণ পেয়ে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে মুক্ত দিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা। 

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর