চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় যৌতুকের জন্য খাদিজা আক্তার (২৩) নামের এক গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ইব্রাহিম প্রধান শ্যালো ইঞ্জিনচালিত সেচপাম্প চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার বাড়ি উপজেলার নায়েরগাঁও ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বকচর গ্রামে।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ঈদের দিন সকাল ৭টার দিকে ইব্রাহিম স্ত্রীর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) রাতে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যান খাদিজা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার বছর আগে একই গ্রামের দিনমজুর খোকন মিয়ার মেয়ে খাদিজাকে বিয়ে করে ইব্রাহিম (৩৮)। এরপর থেকেই যৌতুক হিসেবে টাকা দাবি করে নির্যাতন শুরু করে আসছিল সে।

স্থানীয়রা জানান, এটি ইব্রাহিমের তৃতীয় বিয়ে। যৌতুকের জন্য নির্যাতন সইতে না পেরে আগের দুই স্ত্রী পালিয়ে বেঁচেছেন। তবে শেষরক্ষা হয়নি হতদরিদ্র বাবার মেয়ে খাদিজার।

প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার দিন সকাল ৭টার দিকে খাদিজার শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন ইব্রাহিম। দ্রুত এগিয়ে আসেন মনির ও মহসিন নামের দুই প্রতিবেশী। তারা পাটের বস্তা ভিজিয়ে আগুন নেভান। সঙ্গে সঙ্গে খাদিজাকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

হাসপাতালে খাদিজার মৃত্যু হলে স্বজনদের না জানিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তড়িঘড়ি করে মরদেহ দাফন করে। রোববার (১৪ এপ্রিল) মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পান পিতা খোকন মিয়া। পরে তিনি মতলব দক্ষিণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

খোকন মিয়া বলেন, বিয়ের পর থেকেই খাদিজাকে যৌতুকের জন্য মারধর করত ইব্রাহিম। এসব নিয়ে অনেকবার সালিশ-বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু আমার যৌতুক দেওয়ার সামর্থ্য নেই দেখে মেয়েটা মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করে গেছে। তিনি এ ঘটনায় জামাতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিপন বালা বলেন, ওই তরুণীর শরীর প্রায় পুড়ে যায় আগুনে। একদিন পর ১২ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যান খাদিজা। খাদিজার শাশুড়ি যায়েদা খাতুনকে (৬৭) বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। তাকে খোকন মিয়ার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন। ওই নারীর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তার স্বামী ইব্রাহিম প্রধান পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

আনোয়ারুল হক/এসএসএইচ