স্ত্রী-সন্তানসহ তারেকুল ইসলাম

‘শনিবার রাতে হোয়াটস অ্যাপে ফোন করে ছেলে যখন বলল– আব্বু আমরা এখন মুক্ত, আর ঝামেলা নেই। আল্লাহ চাইলে আবার আমাদের দেখা হবে। তখন মনে হয়েছিল পৃথিবীতে নতুন করে বাঁচলাম।’

এভাবেই সোমালিয়ার জলদস্যুদের জিম্মি দশা থেকে ছেলের মুক্তির খবর জানাচ্ছিলেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর থার্ড ইঞ্জিনিয়ার তারেকুল ইসলামের বাবা মো. দেলোয়ার হোসেন (৬৪)। রোববার (১৪ এপ্রিল) রাতে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে ঢাকা পোস্টকে তিনি এ সব কথা জানান।

জানা যায়, তারেকুল ফরিদপুরের মধুখালির উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ছকরিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন ও হাসিনা বেগমের ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তারেকুল। তার বড় বোন দুলিয়া সুলতানা ও ভাই মো. হাসান ইসলাম।

তারেকুল বিয়ে করেছেন ২০১৯ সালে নাটোরের গুরুদাসপুর এলাকায়। তার এক বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। তিনি জিম্মি হওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী নুসরাত মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করছি ছেলেসহ অন্য নাবিকদের মুক্তির জন্য। মালিকপক্ষ কথা রেখেছে। সরকারও সহায়তা করেছে। আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা গত এক মাস ধরে এমন একটা দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। 

তিনি আরও বলেন, কয়লা বোঝাই জাহাজটি নিয়ে ওই নাবিকেরা বর্তমানে দুবাইয়ের পথে আছে। সেখানে পৌঁছাতে আট দিনের মতো সময় লাগবে।

তারেকুলের বড় ভাই মো. হাসান বলেন, আমি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কাজ করি। ও জাহাজে থাকত বলে আমাদের অনেক সময় সাক্ষাৎ হতো না। আমাদের এবারের ঈদটা ওকে ছাড়া নিরানন্দে কেটেছে। তবুও ঈদের দুই দিন পর ওর মুক্তির খবর পেলাম। এটাও আমাদের কাছে ঈদের আনন্দের চেয়ে কম না।

তারেকুলের মা হাসিনা বেগম বলেন, আমি সব সময় জায়নামাজে পড়ে থেকেছি। দোয়া করেছি আমার সন্তানসহ জিম্মি সব সন্তানকে তার বাবা-মায়ের কোলে যেন আল্লাহ ফিরিয়ে দেন। আল্লাহ তাই দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, রাতে ছেলে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে বলেছে তারা ডাল দিয়ে ভাত খেয়েছে। শিপে যে পরিমাণ খাবার আছে তা দিয়েই তাদের দুবাই পর্যন্ত চালিয়ে নিতে হবে। এতে সমস্যা হবে না। তারেকুল আমাকে বলেছে আর কোনো ঝামেলা নেই। এখন মালিকপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে শিপে চট্রগ্রাম বন্দর দিয়ে বা দুবাই থেকে বিমানপথেও দেশে ফিরতে পারবে।

তারেকুল ২০১১ সালে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্রগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। পড়াশোনা শেষ করে ২০১৭ সালে চাকরি নেন চায়না কোম্পানির একটি জাহাজে। এরপর আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে গত বছরের পহেলা ডিসেম্বর চাকরি নেন এস আর শিপিং লিমিটেডের এই জাহাজে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ দুপুরে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি আবদুল্লাহ। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিটের দিকে জাহাজ থেকে নেমে যায় দস্যুরা। মুক্তিপণের বিনিময়ে গত শনিবার রাতে জাহাজটি নাবিকসহ মুক্ত করে দেয় জলদস্যুরা।

জহির হোসেন/আরকে