কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে দান সিন্দুক থেকে পাওয়া ২৭ বস্তা টাকা গণনায় এরইমধ্যে সাত কোটি ৪০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। চার মাস ১০ দিনের মাথায় মসজিদের ৯টি দান সিন্দুক খুলে মিলেছে ২৭ বস্তা টাকা, বিপুল স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭ টায় সিন্দুক খোলে মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ৯টার পরেই শুরু হয় গণনার কাজ। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত গণনা করা হয়েছে ৭ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।

রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাত ১০টা পর্যন্ত গণনায় ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। মসজিদের একাউন্টে জমা করার জন্য এ টাকাগুলো রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখায় পাঠানো হয়েছে। এখনও চলছে গণনার কাজ। এতে প্রায় ২২০ জনের একটি দল অংশ নিয়েছে।

জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়।

এর আগে ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর তিন মাস ২০ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৩টি বস্তায় ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। ঐতিহাসিক এ মসজিদের দানবাক্সে একসঙ্গে এত টাকা পাওয়াটা তখন ছিল নতুন রেকর্ড। এবার সে রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মসজিদটিতে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।

এর আগে গত বছরের ১৯ আগস্ট খোলা হয়েছিল এ মসজিদের ৮টি দানবাক্স। তখন রেকর্ড ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাড়ে ১৩ ঘণ্টায় ২০০ জনেরও বেশি লোক এ টাকা গণনা শেষে রেকর্ড ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া একটি ডায়মন্ডের নাক ফুলসহ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া যায়।

মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের নয়টি দান দানবাক্স ও একটি ট্যাঙ্ক খোলা হয়। দান দানবাক্সগুলো খুলে ২৭টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় আনা হয়েছে গণনার জন্য। এখনও চলছে টাকা গণনার কাজ।

জেলা শহরের নরসুন্দা নদী তীরের ঐতিহাসিক এই মসজিদে লোহার নয়টি দানসিন্দুক রয়েছে। প্রতি তিন থেকে চার মাস পরপর এই সিন্দুক খোলা হয়।

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে জানান, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অন্যতম একটি জায়গা। সকল ধর্মের মানুষ এখানে দান করে থাকেন। তাদের দানের অর্থ দিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স করা হবে যেখানে, একসাথে ৩০ হাজার মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবেন। 

মসজিদ পরিচালনা কমিটির তথ্য মতে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে নয়টি দানবাক্স থাকলেও এবার আরও একটি ট্যাঙ্ক বাড়ানো হয়েছে। দানের পরিমাণ বাড়ায় এখন পাগলা মসজিদের দানবাক্সের সংখ্যা ৯টি ও একটি ট্যাঙ্ক যুক্ত হয়েছে।

মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।

পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৩০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

মোহাম্মদ এনামুল হক/এমএসএ