নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছেলেকে প্রার্থী করে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) একরামুল করিম চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার ও তার সংসদ সদস্য পদ স্থগিতের দাবি জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালী প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সূবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনাম চৌধুরী সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ উল্যা খান সোহেল, সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন, আবদুল মালেক উকিলের বড় ছেলে গোলাম মহিউদ্দিন লাতু, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আবদুল মালেক উকিলের ছোট ছেলে বাহার উদ্দিন খেলন, সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান নাছেরসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরীকে পার্শ্ববর্তী কবিরহাট উপজেলা থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েকদিন আগে ভোটার স্থানান্তর করে সুবর্ণচর উপজেলায় এনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এইচএম খায়রুল আনাম চৌধুরী সেলিমের বিরুদ্ধে প্রার্থী করিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। একই সঙ্গে একরামুল করিম চৌধুরী প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসন ও সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে অরাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন করবেন না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র শহিদ উল্যা খান সোহেল বলেন, নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার ছেলেকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে প্রার্থী করিয়েছেন এবং ছেলেকে জেতানোর জন্য সুবর্ণচরে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এনে অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দেওয়াচ্ছেন। এছাড়া অরাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ জেলার নেতাদের হেয় করার পাঁয়তারা করছেন। একরামুল করিম চৌধুরীর ওইসব বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার সংসদ সদস্য পদ স্থগিত ও তাকে দল থেকে বহিষ্কার দাবি করার দাবি জানান এই নেতা।

সূবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনাম চৌধুরী সেলিম বলেন, একরামুল করিম চৌধুরী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে এলাকার উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন এবং যারা এমপির অপরাজনীতি ও হুমকি-ধমকির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আমার পক্ষে ভোট করছেন, সেই সব নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করছেন। এসব ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও এমপির নির্দেশে থানার ওসি কোনো মামলা রেকর্ড করছেন না এবং আসামিদের ধরছেন না।

খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বলেন, একরামুল করিম চৌধুরীর বাবা হাজী মো. ইদ্রিস দলের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। একরামুল করিম চৌধুরী নিজেও ২০০১ সালের নির্বাচনে নোয়াখালীর গর্ব আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেবের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেন এবং আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেব সম্পর্কে পাবলিক মিটিংয়ে মাতাল অবস্থায় কটূক্তি ও অকথ্য গালিগালাজ করেন। গত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একরামুল করিম চৌধুরী দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে তাদের পক্ষে ভোট করেন। তার এসব কর্মকাণ্ডে সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবি তোলেন এই প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা।

এদিকে বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করে। ওই বিশেষ বর্ধিত সভায় জেলা, সদর উপজেলা, নোয়াখালী পৌরসভা ও সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায়ও নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর অন্যায় আচরণ ও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার চেয়ে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও তার সংসদ সদস্য পদ স্থগিতের দাবি জানানো হয়।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় কোনো পদেই প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করার ফলে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম এবং নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরী। ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন মো. আবদুল্যাহ আল মামুন, মো. ফয়সাল, মো. ফরহাদ হোসেন চৌধুরী, মো. রফিক উল্যাহ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলেয়া বেগম, বিবি ফাতেমা, মুন্নী আহমেদ ও সালমা সুলতানা।

জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নওয়াবুল ইসলাম বলেন, সুবর্ণচর উপজেলায় কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। ফলে চেয়ারম্যান পদে দুইজন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী রয়েছেন। আজ ২৩ এপ্রিল তাদের সবাইকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং আগামী ৮ মে উপজেলা দুটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

হাসিব আল আমিন/আরএআর