ছাত্রলীগ নেতা আফাজ উদ্দিন। ছবি : সংগৃহীত

ফেনীর সোনাগাজী চরমজলিশপুর ইউনিয়নের এক প্রবাসীর স্ত্রী থেকে দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আফাজ উদ্দিন সৌরভের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) এ ঘটনায় সংগঠন বহির্ভূত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগ। তিনদিনের মধ্যে তাকে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চান্দলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী বেলায়েত হোসেনের ছেলে ফাহাদ হোসেনের সঙ্গে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি ফাহাদের মা মনোয়ারা জানতে পেরে ছেলে ফাহাদ হোসেনের সঙ্গে ওই মেয়ের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরপরেও মেয়েটি যোগাযোগ বন্ধ না করে ছেলের বাড়ির আশপাশে ঘুরতে দেখা যায়। নিরুপায় হয়ে ছেলের মা মেয়েদের বাড়িতে গিয়ে তার অভিভাবককে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। 

এ সময় মেয়ের পরিবার ছেলের মাকে আটকে রাখে। খবর পেয়ে চরমজলিশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আফাজ উদ্দিন সৌরভ মতিগঞ্জ গিয়ে ফাহাদের মাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এ অজুহাত দেখিয়ে ফাহাদের মায়ের ব্যবহৃত স্বর্ণ স্থানীয় কুঠিরহাট বাজারের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে বন্ধক রেখে দেড় লাখ টাকা আদায় করেন। পরে সৌরভ ওই প্রবাসীর স্ত্রীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় আরও ২০ হাজার টাকা নেন। রোববার (২১ এপ্রিল) প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে আবারও ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

ফাহাদের মা মনোয়ারা বলেন, সৌরভ নিজে বাড়িতে এসে আমাকে নিয়ে কুঠিরহাট বাজারে গিয়ে আমার ব্যবহৃত স্বর্ণ স্থানীয় কুঠিরহাট বাজারের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে বন্ধক রেখে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সম্প্রতি সে আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে চাপ প্রয়োগ করে। এখন নিরুপায় হয়ে বিষয়টি আমার স্বামী, স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। পরে আমার স্বামী টাকা ফেরত আনতে আমাকে চাপ দেন। সৌরভের কাছে টাকা চাইলে উল্টো টাকা না দিয়ে আমাকে হুমকি দেন।

চরমজলিশপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. রিয়াদ বলেন, ওই মেয়ের সঙ্গে ফাহাদের বিয়ে না দেওয়ার কথা বলে সৌরভ তার (ফাহাদের) মাকে ব্ল্যাকমেইল করে মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবুর নাম ভাঙ্গিয়ে এ টাকা আদায় করেছে। টাকার জন্যই সে এ কাজ করেছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চরমজলিশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আফাজ উদ্দিন সৌরভ বলেন, মতিগঞ্জে ওই মেয়ের বাড়িতে ফাহাদের মাকে আটক রাখার বিষয়টি জানতে পেরে আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সঙ্গে কথা বলার পর মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদে সালিশি বৈঠকের কথা বলে ছেলের মাকে নিয়ে আসি। পরে মতিগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়। এখানে কোনো লেনদেনের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। 

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের হলেও চারমাস পর এসে এখন স্থানীয় ইউপি সদস্য রিয়াদ এবং রিংকুর প্ররোচনায় আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এ অপবাদ দিচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে মতিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু বলেন, ফাহাদের মা মতিগঞ্জে মেয়েদের বাড়িতে আসার বিষয়ে জেনেছিলাম। এই ঘটনা জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তের। তখন ফাহাদের মাকে তাৎক্ষণিক স্থানীয় ইউপি সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তির মাধ্যমে বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। দুই পক্ষের কথা শুনার জন্য ছেলে-মেয়ে উভয়কে নিয়ে অভিভাবকদের পরিষদে আসার জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন তারা আসেননি। আমরাও নির্বাচনকালীন ব্যস্ততা থাকায় বিষয়টি আর গুরুত্ব দেইনি। যেহেতু তারা বৈঠকে আসেনি, লেনদেনের বিষয়েও আমি কিছু জানি না। এখন জানাজানি হওয়ার পর কথাগুলো শুনতেছি। 

সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন সাইমুন বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে তাকে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদ্বীপ রায় বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। তবে থানায় এখনো কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

তারেক চৌধুরী/এএএ