মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় বহুতল ভবনের ছাদ থেকে পরে মাহিয়া আক্তার (১৭) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার বাসস্ট্যান্ডের ভুল জয়রা এলাকায় আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মাহিয়া আক্তার জেলার সিংগাইর উপজেলার বড় কালিয়াকৈর গ্রামের আল মামুনের মেয়ে। সে আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগের ছাত্রী ছিল এবং ১৮ পারা কোরআনের হাফেজা।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৭টার দিকে ক্লাসের এক ফাঁকে মাদ্রাসার ছাদে যায় মাহিয়া আক্তার, হেফজ বিভাগের ছাত্রী মরিয়ম আক্তার (১৪) ও বাবলী আক্তার (১৫)। এ সময় মাহিয়া ও মরিয়ম ছাদে দুষ্টুমির একপর্যায়ে মাহিয়া দৌড় দিয়ে ছাদের টিনের বেড়া ভেঙে নিচে পড়ে যায়। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে থাকা দায়িত্বরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় সদর থানা পুলিশ। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা ও মাদ্রাসার ছাত্রীদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, সকালে ওই ছাত্রীসহ আরও দুইজন মাদ্রাসার ভবনের ছাদে হাঁটা চলা করার সময় মাহিয়া ছাদ নিচে পড়ে যায়। পরে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক ওই ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পূর্ব পাশে সীমানা প্রাচীর ঘেঁষা বহুতল ভবনের পুরোটাই আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদ্রাসা। ওই ভবনের নিচ থেকে ওপরে ওঠার সিঁড়িতে কোনা রেলিং নেই এবং ছাদের চারপাশেও রেলিং নেই। ছাদের এক পাশে রান্নার কাজ করা হয়। আর অন্য পাশ খোলা এবং টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। ওই মাদ্রাসায় বিভিন্ন বিভাগে ২০০ থেকে ২৫০ জন ছাত্রী লেখাপড়া করে এবং ২০১১ সালে এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মাদ্রাসার মুহতামিম (পরিচালক) হাফেজ মোহাম্মদ মইনুদ্দিন দীর্ঘদিন মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছেন। তবে মাঝে মধ্যেই ওই মাদ্রাসায় নানা ঘটনা ঘটে।  আজকে এক ছাত্রী ছাদ থেকে পড়ে মারা গেল। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে। 

মাদ্রাসার নুরানি বিভাগের শিক্ষিকা শারমিন আক্তার জানান, সকালের দিকে মহিয়াসহ তিনজন ছাত্রী ছাদে ওঠে দৌড়াদৌড়ি ও দুষ্টুমি করছিল। এ সময় হয়তো ওই মেয়েটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে শুনেছি মারা গেছে। ভবনে ছাদের গেট সব সময় খোলাও থাকে না, শুধুমাত্র রান্নার সময় খোলা হয়। আর মেয়েদের ছাদে ওঠতে আমারা নিষেধ করি।

এ বিষয়ে জানতে আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদ্রাসার মুহতামিম (পরিচালক) হাফেজ মোহাম্মদ মইনুদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি কলটি কেটে দেন। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাবিল হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। মাদ্রাসার লোকজন ও স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি সকালের দিকে ওই মাদ্রাসার ছাদে দুইজন ছাত্রী হাঁটা চলা করছিল। এ সময় অসাবধানতাবশত ওই ছাত্রী ছাদ থেকে পড়ে যায়। শুনেছি ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক ওই ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেছেন। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সোহেল হোসেন/আরএআর