বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই সবকিছুই চলছে স্বাভাবিকভাবে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বনে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দিন যতই গড়াচ্ছে মানুষের মধ্যে ততই বাড়ছে উদাসীনতা। আগের মতো নেই করোনাভীতি, নেই স্বাস্থ্য সচেতনতাও। করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি রোধে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও তা যেন কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ।

বুধবার (২৮ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রংপুরের শপিংমল, হাট-বাজার, গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে। কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে নেই যথেষ্ট প্রস্তুতিও। 

বর্তমানে সরকারি অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাকি সব জায়গাতেই স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে যেন লুকোচুরি খেলা চলছে।

তবে ভারতজুড়ে ব্যাপকহারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সচেতন মহলসহ চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে আরো কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

সরকার শর্তসাপেক্ষে মার্কেট, বিপণিবিতানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে।

স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ

কিন্তু প্রশাসনের লোকজন যতক্ষণ থাকছে, ততক্ষণই মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বাকি সময়টা যেন সবার মধ্যেই খামখেয়ালিপনা চলছে।

বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রংপুর নগরীর জাহাজ কোম্পানি শপিং কমপ্লেক্স, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট, সালেক মার্কেট, শাহ্ জামাল মার্কেট, জেলা পরিষদ কমিউনিটি সুপার মার্কেট, সিটি বাজার, লালবাগ হাটসহ বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। ক্রেতা-বিক্রেতারাও মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।

অথচ করোনার প্রথম তরঙ্গে এসব স্থানে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, ব্লিচিং পাউডারসহ জীবাণুমুক্তকরণ স্প্রে ছিটানোর ব্যবস্থা ছিল। এখন হাটবাজার, শপিংমল ও মার্কেটের কোথাও এসবের কিছুই নেই। গাদাগাদি করে কেনাবেচা চলছে। তবে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে বিকিকিনি চলছে।

জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে কথা হয় সাহেদ সোবহান নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার ভয় তো আছেই, তবে মুখে মাস্ক পরিধান করেই বাসা থেকে মার্কেটে এসেছি। প্রত্যেক দোকানেই উপচে পড়া ভিড়। হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবস্থা নেই।

প্রত্যেক মার্কেটের সামনে ছিল উপচে পড়া ভিড়

গ্রান্ডে হোটেল মোড়ে সালেক মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ এলাকার নাজমিন নাহার ও রেজেকা বেগমকে দেখা যায় মুখে মাস্কবিহীন। তারা মার্কেটের ভেতরে হেঁটে হেঁটে দোকান ঘুরলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্পর্কে উদাসীন ছিল।

মুখে মাস্ক নেই কেন? জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে জানান, অটোবাইকে করে শহরে এসেছেন বাচ্চাদের কাপড় কিনতে। বাজেট খুব কম, কয়েকটা দোকান দেখে কাপড় কিনে নিয়ে যাব। মাস্ক সঙ্গে রয়েছে, কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে মুখে পরিনি।

একই অবস্থা অন্য মার্কেটগুলো। তবে বড় বড় শপিংমলগুলোতে চিত্র কিছুটা ভিন্ন। সেখানে উপচে পড়া ভিড় চোখে না পড়লেও দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিকিকিনি করতে।

সরকারের দেওয়া শর্তপালনের ব্যাপারে রংপুর মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, আমরা সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে দোকানপাট খুলেছি। অধিকাংশ ব্যবসায়ী দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হাত ধোয়া ও মাস্ক পরিধান ছাড়া কোনো কিছু বিক্রি হচ্ছে না।

এদিকে নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়ের রয়্যালিটি মেগামলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানবীর হোসেন আশরাফি জানান, নগরীতে তার সাতটি মেগামল সেন্টার রয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে।

রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, রংপুরে করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সরকারি বিধিনিষেধ প্রতিপালনে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে ৩৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে আরও ৪৪ করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ৪৩ জন।

এ নিয়ে বিভাগে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে মোট ১৭ হাজার ৮৬০ আক্রান্ত পাওয়া গেছে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৪৫ জনের। বিভাগের আট জেলায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ৪৭১ জন রোগী।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর