১৭ বছর বয়সে একটি বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় বাঁ হাত ও বাঁ পা কাটা পড়ে মিজানুরের। এতে তরুণ বয়সেই পঙ্গু হন তিনি। অভাবী বাবা ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি। কিছুদিন পর তারা বাবাও মারা যান। এ অবস্থায় তাকে হাল ধরতে হয় সংসারের। তারপর থেকেই শুরু হয় জীবনযুদ্ধ।

বলছিলাম নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ী গ্রামের মৃত জব্বর আলী ফকিরের ছেলে শারীরিকভাবে পঙ্গু মিজানুর রহমানের কথা।

মিজানুরের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে ইয়াদুল ইসলাম (১১) তাকে কাজে সহযোগিতা করে। মেজ ছেলে রাজিকুল ইসলাম (৭) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে ও ছোট ছেলে রাজিবের বয়স ১ বছর এবং ৪ বছরের মেয়ে আজমিরা প্রতিবন্ধী।

জানা যায়, অন্যের জমির কৃষিপণ্য ঘোড়ার গাড়িতে বহন করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালান মিজানুর রহমান (৫০)। ৩৩ বছর আগে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় তার বাঁ হাত ও বাঁ পা কাটা পড়ে। তবু থেমে নেই তার জীবন। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে আয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। কোনো কোনো দিন কাজ থাকে না। শেষ সম্বল বলতে তিনটি ঘোড়া ছাড়া আর কিছুই নেই।

মিজানুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, পঙ্গুত্ব আমাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। কারও কাছে হাত না পেতে নিজের জীবিকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। সেই থেকে অদম্য শক্তি নিয়ে এখনো ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।

সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, আমি পরিশ্রম করে সংসার চালিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু সরকারিভাবে আমাকে সহযোগিতা করা হলে আমার ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারব।

একসময় তিনি ভাঙ্গুরা উপজেলায় ঘোড়ার গাড়ি চালাতেন। এখন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ী গ্রামে ঘোড়ার গাড়িতে ধান বহন করেন। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে অন্যের জায়গায় একটি ঝুপড়ি ঘর করে বসবাস করছেন মিজানুর রহমান।

প্রতিবেশী বুলবুলি বেগম বলেন, মিজানুর একজন পঙ্গু মানুষ। তার একটা মেয়েও প্রতিবন্ধী। আপনারা তাদের দিকে একটু নজর দিন। যাতে তিনি তার পরিবার নিয়ে সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করতে পারেন।

মিজানুর রহমানকে আশ্রয়দাতা জামেলা বেগম ঢাকা পোস্টকে জানান, মিজানুর রহমানকে তার জায়গায় আশ্রয় দিয়েছেন মানবিক দিক থেকে। কেননা সমাজে এখনো অনেক মানুষ সুস্থ থাকার পরও সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে জীবন পার করছেন। কিন্তু মিজানুর রহমান তা করেননি।

মিজানুর রহমানের বড় ছেলে ইয়াদুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা ঘোড়ার গাড়ি চালান। কোনো রকম আমরা খেয়ে না-খেয়ে বেঁচে আছি। আমরা অর্থের অভাবে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারি না।

বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমন অবস্থা যদি হয়ে থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই তার পাশে দাঁড়াব।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তমাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার এমন ঘটনা জানা ছিল না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে সহযোগিতা করা হবে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবেও তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।

এনএ