প্রকল্পের দ্বিতীয়ও মেয়াদ শেষ হওয়ায় নীলফামারী জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের ১৪ জন কর্মচারী বেকারত্ব নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ২০১৬ সালে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের আউটসোর্সিংয়ে চাকরি নেন তারা। এর মধ্যে নীলফামারী জেলায় ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে ১৪ জন কর্মরত রয়েছেন। 

এক সময় চাকরি স্থায়ী হবে এমন কথা শুনেছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। সেই স্বপ্ন থেকেই অন্যত্র চাকরির চেষ্টা করেননি কখনো। চাকরিস্থায়ী হবে এ আশায় সরকারি চাকরির বয়স হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। স্ত্রী-পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন, কী করবেন, কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছেনা তারা। এমন সমস্যায় শুধু নীলফামারীর কর্মচারীরাই নয়, ইসির আইডিইএ প্রকল্পে কর্মরত দুই হাজার ২৬১ কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই পড়েছেন বিপাকে। তাদের মধ্যে এখনই এক হাজার ১৩০ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বেকার হওয়ায় শঙ্কায়। কারণ, আগামী ২৫ জুন এ প্রকল্পের দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োজিত অভিজ্ঞ জনবল বাদ দিয়ে নতুন জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসি। ফলে টানা দুই মেয়াদে কর্মরত থাকা অভিজ্ঞ এসব কর্মকর্তা-কর্মচারিরা চাকরি জীবনের মাঝ পথে এসে বেকার হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আউটসোর্সিংয়ের সৃষ্ট পদগুলোর বিপরীতে স্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারী নেবে। ১৭মে তাদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ছিল। কিন্তু ১৪ মে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আউটসোর্সিংয়ে কর্মরতদের নতুন করে নিয়োগ না দেওয়ার নানা চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে। তাদের পরীক্ষার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করতে চেয়েছিল ইসি। পরবর্তীতে আদালতে রিট করে পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয় তাদের। বর্তমানে ইসির চলমান ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকার কারণে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন না অনেক চাকরিপ্রত্যাশী।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের প্রথম দিকে 'আইডিইএ' প্রকল্পের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ দেয় নির্বাচন কমিশন। এ প্রকল্পে এক হাজার ১৩০ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ পেয়ে বিভিন্ন জেলার মাঠপর্যায়ের দপ্তরগুলোতে কাজে যোগদান করেন। মাত্র ১৩ হাজার টাকা বেতনে এক বছর মেয়াদি এ চাকরির মেয়াদ ২০২০ পর্যন্ত বাড়ানো হয় পরবর্তীতে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে চার হাজার টাকা বেতন বাড়ানো হয়। ২০২০ সালে প্রকল্পটি 'আইডিইএ (২য় পর্যায়)' নামে অদ্যাবধি চলমান রয়েছে। বিভিন্ন সময় প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্তরা তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য দাবি করলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পে দুই হাজার ২৬১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ২০ জন সহকারী পরিচালক, ২০ অ্যাসিস্টেন্ট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ৮৪ জন সহকারী ইঞ্জিনিয়ার, ২০ জন উপসহকারী পরিচালক, সাতজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা/ব্যক্তিগত সহকারী, ৩১ জন সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর, ১৫ জন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর, ছয়জন ইলেকট্রিশিয়ান, চারজন সহকারী স্টোরকিপার, ১০ জন কাউন্টার, ৪৫ জন অফিস সহায়ক, দুজন প্যাকিং সুপারভাইজার, চারজন মেশিন সুপারভাইজার, ৩৫ জন ডেসপ্যাস অপারেটর, দুজন কোয়ালিটি অপারেটর, অ্যাসিওরেন্স ইনচার্জ, ৩৬ জন স্ক্যানিং অপারেটর, পাঁচজন কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স অপারেটর, এক হাজার ৩৭২ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ৫১৯ জন স্ক্যানিং অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স অপারেটর ও ১৫ জন ড্রাইভার রয়েছে।

এই প্রকল্পে চাকরিরত কয়েকজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জানান, সাত বছর যাবৎ চাকরি করছি। এখন প্রকল্প শেষ হওয়ার ঘোষণা পেয়ে ভয়ে আছি। বিভিন্ন সময় চাকরি স্থায়ীকরণের কথা বলা হলেও অদ্যাবধি স্থায়ী করা হয়নি। চাকরি স্থায়ী হবে এমন অপেক্ষায় অন্য কোনো চাকরির পেছনে সময় দেওয়া হয়নি। এখন সরকারি চাকরির বয়স শেষ। আমরা সর্বসাকূল্যে বেতন পাই ১৭ হাজার ৬৩০ টাকা। এ দিয়েই সংসার পরিজন নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। আমাদের এ নিয়োগ থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের চাকরি না থাকলে পরিবার সন্তান নিয়ে পথে বসতে হবে। এতো বছর কাজ করার পরও আমাদের অভিজ্ঞতার কোনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এমনকি আমাদের পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আদালতে রিট করে আমরা সেই সুযোগ ফিরিয়ে এনেছি। তবে কমিশনের ওপর আস্থা রেখে অনেকে রিট করেননি। তারা এই পরিক্ষায় অংগ্রহণের সুযোগ পাবেন না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না পাওয়া অনেক অপারেটর জানিয়েছেন, এই বয়সে এসে চাকরি হারালে তাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ খোলা থাকবে না। তবে আমরা পরীক্ষার দেওয়ার সুযোগ পেলেও প্রস্তুতির সুযোগ পাচ্ছি না। কর্তৃপক্ষ এমন সময় পরীক্ষা রেখেছেন, যখন সারাদেশে চলছে উপজেলা নির্বাচন। এ সময় দিনরাত দায়িত্ব পালন শেষে পড়ার সুযোগ কোথায়?

এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিজ্ঞ জনবল না থাকলে আমাদের কাজে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হবে। নতুন জনবলে আমাদের প্রতিটা কাজে ভোগান্তি পোহাতে হবে। তবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কাছে আমরা নিরুপায়।

শরিফুল ইসলাম/এমএএস