কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট মাদ্রাসাপাড়ার সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির ভাড়া করা গোডাউনে সাড়ে ১৩ টন চালের মজুত পাওয়া গেছে। গোডাউনের মালিক তালেবের কাছে থেকে সাইফুল ইসলাম ভাড়া নিয়ে গোডাউনটি চালাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ স্লোগানের খাদ্য অধিদফতরের সিল-সংবলিত ৩০ কেজির বস্তার সর্বমোট সাড়ে ১৩ টন সরকারি চাল ওই গোডাউনে মজুত আছে।

গোডাউনের মালিক সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস থেকে এই সাড়ে ১৩ টন চাল ৩৮ টাকা দরে কিনেছেন এবং ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। কিন্তু চাল কেনার বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

বিষয়টি জানার পর থেকেই উপস্থিত জনগণ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করতে থাকলেও প্রায় তিন ঘণ্টা ফলাফল শূন্য। এরপর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জেলা পুলিশকে অবগত করার পর জগতী ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর চাল ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নানা তালবাহানা শুরু করেন।

একজন সাংবাদিক তার কাছে টাকা চেয়েছেন বলে হইচই শুরু করেন। এ সময় সাইফুল ইসলামের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেও মোবাইল হাতে নিয়ে নিজেকে বড় ইউটিউবার পরিচয় দিয়ে উচ্চস্বরে উপস্থিত সবার সামনে সাংবাদিকদের মারতে তেড়ে আসেন। পরে জনগণের উপস্থিতিতে সাইফুলের দোষ প্রমাণিত হলে সবাই সাইফুল ও তার ছেলেকে থেমে যেতে অনুরোধ জানান। পরে চাল কেনার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি সাইফুল।

চাল সরবরাহকারী সংস্থা খাদ্য অধিদফতরের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের খাদ্য পরিদর্শক মো. জহুরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি জেনেছি এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শওকত কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে গোডাউন পরিদর্শন করেছি। গোডাউনের ভেতরে সরকারি বস্তায় চাল মজুত দেখতে পাওয়া গেছে। গোডাউনটি বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। 

তিনি বলেন, ওই চাল পুলিশের রেশনের চাল। নিয়ম মেনেই তিনি কিনেছেন। তবু খাদ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে তদন্ত টিম আসবে এবং তাদের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিষয়ে বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম এ মোমিন মন্ডল বলেন, এই চাল কীভাবে সেখানে গেল, তা আমার জানা নাই। হয়তো এটা রেশন বা দুস্থদের চাল হতে পারে। ক্রয় চালান না থাকলে এটা অবশ্যই অবৈধ।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খাইরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি এখনই দেখছি।

পরবর্তীতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে জেলা ফুড অফিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ নেবে।

কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খাইরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের পুলিশ সদস্যদের মেসে বাজার করে খেতে হয়। তাদের বাজার করার জন্য এক্সট্রা কোনো ফ্রেশ মানি থাকে না। সামান্য পরিমাণ রেশন আসে। তাদের মাছ, মাংস, শাকসবজি ও দুধ-ডিম কিনতে হয়। চাল, ডাল, আটা, চিনি ও ভোজ্যতেল বাড়তি পায়।

তিনি বলেন, তারা মাছ, মাংস কেনার জন্য এক্সট্রা চাল-তেল বিক্রি করে। ওই টাকা দিয়ে মেসের বাজার করা হয়। কোনো অনিয়ম হয়নি, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় চাল বিক্রি করা হয়েছে। তারা মাসে দুই-তিন এক পিস করে মাংস খায়। তারা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করে। 

রাজু আহমেদ/এনএ