হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌযোগাযোগ বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীজুড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার (২৫ মে ) দুপুর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি ও বাতাসের গতি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার ফলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে হাতিয়াসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ কালো মেঘের আধিক্য দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় নোয়াখালীর অন্য কোথাও থেকে লোকজন হাতিয়ায় আসতে পারছেন না এবং হাতিয়া থেকে কেউ যেতে পারছেন না। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কে আছেন নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল ক্রমেই উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূলীয় ১৫ জেলা এবং তৎসংলগ্ন দ্বীপ ও চরে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তৎসংলগ্ন দ্বীপ ও চরে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
হাতিয়ার নলচিরা ঘাটের ইজারাদার মো. ফাহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাতিয়া-বয়ারচর চেয়ারম্যান ঘাট রুটে সি-ট্রাক, ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় নোয়াখালীর অন্য কোথাও থেকে লোকজন হাতিয়ায় আসতে পারছেন না এবং হাতিয়া থেকে কেউ যেতে পারছেন না।
হাতিয়ার তমরদ্দি ঘাটের ইজারাদার মো. মিরাজ সর্দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে নৌপথ উত্তাল রয়েছে। ফলে ঢাকা নদী বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যাত্রীসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাতিয়ার সঙ্গে সব চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. নুরুন নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিকেল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। দোকানপাটে মানুষজন নেই। মানুষের মধ্যে সচেতনতা নেই। তবে বেড়িবাঁধের বাইরে যারা থাকেন তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। অতিরিক্ত জোয়ারের ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন
জেলা আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যার দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এটি এখনো শক্তি সঞ্চার করে যাচ্ছে। রোববার সকালে এটা ঘূর্ণিঝড় থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। সারাদিন শক্তি ধরে রেখে এটি রোববার মধ্যরাতে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হানবে। দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মি.মি.) বর্ষণের পাশাপাশি সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তৎসংলগ্ন দ্বীপ ও চরে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ঢাকা পোস্টকে নৌ চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নোয়াখালী জেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যেকোনো ঘূর্ণিঝড় আসলে হাতিয়া বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সব ধরনের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নৌ চলাচল শুরু হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে উপকূলীয় পাঁচ উপজেলায় ৪৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, ১০২ মেডিকেল টিম ও আট হাজার ৩৬০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এই (০১৭২৪০৯৬২৬৯) নম্বরে ফোন করে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা যাবে।
হাসিব আল আমিন/এমজে