রেহানা বেগম একজন গৃহিণী। তার স্বামী পেশায় একজন জেলে, ছোট ছোট দুটি সন্তান নিয়ে বসবাস করেন পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের আশি ঘর কলোনীর একটি ঘরে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বসবাস করা সেই ছোট্ট ঘরটি এখন আর বসবাসের উপযোগী নেই।

শুধু রেহানা নয় এখানে বসবাস করা প্রত্যেকটি পরিবারের একই অবস্থা। মঙ্গলবার (২৮ মে) কুয়াকাটার আশি ঘর কলোনীতে গেলে দেখা যায়, জেলে পল্লীটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। 

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে টানা দুই দিনে লন্ডভন্ড উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ জায়গা। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া। ঝড়ের তাণ্ডবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে কুয়াকাটা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আশি ঘর কলোনী নামে পরিচিতি জেলে পল্লীটি। এই পল্লীর শতভাগ ঘরগুলো ঝড়ের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। অচল হয়ে পড়েছে প্রায় ২০০ মানুষের জনজীবন।

জানা যায়, ২০০৭ সালের সিডরের পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে জেলেদের জন্য কুয়াকাটা পৌরসভার খাজুরা গ্রামে ৮০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রেমালে আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ৮০টি ঘরের শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিশুদের জন্য খাবার তৈরি করার মতো পরিবেশও নেই ওই বসত ঘরগুলোতে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সরকারি সাহায্য বা অনুদান পাননি তারা। 

আশি ঘর কলোনীর বাসিন্দা বৃদ্ধ খলিল হওলাদার বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি সব ভেঙে গেছে। ঘরের চাল উড়িয়ে কোথায় নিয়ে গেছে সেটার কোন খোঁজ পাইনি এখনো। রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমানোর মতো অবস্থাও নেই। ঘরের মধ্যে সব কাদা হয়ে গেছে।  

এই পল্লীর অপর এক বাসিন্দা সেলিম বলেন, আমাদের ৮০ ঘরের মধ্যে প্রায় ৭০টির বেশি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। কেবল মাত্র আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। সরকারের কাছে আমরা আবেদন করছি খুব দ্রুত আমাদের সাহায্য করুন। 

এ বিষয় কুয়াকাটা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান শরীফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আমার সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। ৮০ ঘর কলোনীর বেশিরভাগ ঘরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে তারা খুবই অসহায় জীবন যাপন করছে। তবে সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে আমরা তাদের দুয়ারে পৌঁছে দেব। 

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, উপজেলার সব চেয়ারম্যানদের খাবার বরাদ্দ দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে দ্রুত খাবার পৌঁছে যায়। তবে আশি ঘর জেলে পল্লীর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আমি এখনো কোনো তথ্য পাইনি। খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান তিনি। 

এসএম আলমাস/আরকে