ঘূর্ণিঝড় রেমালে বাগেরহাটে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বাগেরহাট সদর, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধসে গেছে ৩৫/১ পোল্ডারের টেকসই বেড়িবাঁধের ২ কিলোমিটার ব্লক। মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কারণেই ব্লক ধসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে শরণখোলায় ৩৫/১ পোল্ডারের টেকসই বেড়িবাঁধের ২ কিলোমিটার ব্লক সরে গেছে। মোরেলগঞ্জের শ্রেনিখালী এলাকায়ও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের গোপাল কাঠি এলাকার বাঁধের দুটি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বিজ্ঞাপন
এদিকে বাঁধ ধসে ও উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় বিপুল পরিমাণ মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৫ লাখ মানুষ।
বুধবার দুপুরে গোপালকাঠি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের কয়েকশ ফুট জায়গা পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে ভৈরব নদীর গর্ভে। এতে ওই এলাকার বিপুল সংখ্যক ঘেরের মাছ ভেসে গেছে।
বিজ্ঞাপন
রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছে। বাড়িঘর সব জায়গা পানি উঠে গেছে। ঘেরের মাছ ভেসে গেছে সবার।
ঘটনাস্থল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী কুমার স্বস্তিক বলেন, আমরা সব বাঁধের খোঁজ নিচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামতের চেষ্টা করছি। মানুষের যাতে ভোগান্তি কম হয় সেজন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
শরণখোলার গাবতলা, তাফালবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় ব্লক সরে সম্পূর্ণ বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
গাবতলা এলাকার ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, যখন বাঁধটি নির্মাণ করা হয়, তখন মাটির পরিবর্তে বালু দেওয়া হয়েছিল। এই বালু দেওয়ার কারণেই ব্লক সরে গেছে। এখনতো পুরো বাঁধ ধসে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
একই এলাকার জাফর তালুকদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, যখন বাঁধ হয়েছিল তখন খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখনতো মনে হচ্ছে, বাঁধ না হওয়াই ভাল ছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মো. আল বিরুনী বলেন, বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন প্রকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওভার ফ্লোর কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছি, যাতে জনবসতিতে আর পানি প্রবেশ করতে না পারে। শরণখোলায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণ করা যে বাঁধ, ওই বাঁধের প্রায় ২ কিলোমিটার জায়গার ব্লক ধসে গেছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করতে পারব।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে অধীনে থাকা পোল্ডার ও বাঁধ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট রিং বেড়িবাঁধ ও গ্রাম্য সড়ক ধসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যার ফলে স্থানীয়রা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বাঁধ ধসের বিষয়ে বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা আসলে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা। ঘূর্ণিঝড় রেমালে এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, নির্মাণ ত্রুটি থাকায় ওই বাঁধের ব্লক ধসে গেছে। অতীতের অবিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পুনরায় সঠিক পদ্ধতিতে কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হবে।
শেখ আবু তালেব/এএএ