‘গত বছর ২০ শতক জমিতে কালো তরমুজ চাষে ভালো ফলন পেয়েছি। এবার ৫০ শতক জমিতে কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের তরমুজ চাষ করেছি। ক্ষেতে থাকা ফলনের মধ্যে এখন পর্যন্ত অর্ধেকের চেয়ে কম তরমুজ বিক্রি করেছি। তাতে লক্ষাধিক টাকা পেয়েছি। এখনো যে পরিমাণ তরমুজ আছে, তাতে আরও দুই লাখ টাকার বেশি তরমুজ বিক্রি করা যাবে।’

হলুদ রঙের তরমুজ চাষে সাফল্যের কথা এভাবেই ব্যক্ত করলেন নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার তমরদ্দি ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামে কৃষক মো. মিস্টু। তিনি হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের তরমুজ চাষ করে পেয়েছেন সফলতা।

ব্ল্যাকবেবি তরমুজের উপরিভাগ হলুদ। ভেতরে টকটকে লাল। স্বাদে মিষ্টি ও সুস্বাদু। হলুদ, কালো, সবুজ― এই তিন রঙের তরমুজে ছেয়ে গেছে মিস্টুর পুরো ক্ষেত। নিজ বাড়ির দরজার পাশে প্রায় ৫০ শতক জমিতে এই তরমুজের চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি।

সরেজমিন জোড়খালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষেতের মাচায় ঝুলছে রসালো তরমুজ। কেউ পরিবারের জন্য কিনে নিচ্ছেন এই রসালো ফল, আবার কেউ শুধু ক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান দিচ্ছেন বৈচিত্র্যময় এই তরমুজের। খেতের পাশে হলুদ ও কালো রঙের তরমুজের স্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনেকে। কয়েকজন তরমুজ ব্যাপারী হলেও অন্যরা এসেছে দেখতে। নয়নাভিরাম এ দৃশ্য দেখতে ও ছবি তুলতে প্রতিদিন মানুষ ভিড় করছেন মিস্টুর ক্ষেতে। 

ঢাকা পোস্টকে মিস্টু বলেন, যশোরে পাওয়ার টিলার চালিয়েছি তিন বছর। সেখানেই ব্ল্যাকবেবি তরমুজ চাষ দেখেছি। এরপর যশোর থেকে চারা এনে এই তরমুজের চাষ শুরু করি। ভবিষ্যতে এক একর জমিতে তরমুজ চাষের ইচ্ছা রয়েছে। তবে এই চাষে পর্যাপ্ত সেচের সমস্যায় পড়তে হয় বলেও জানান তিনি।

চাষপদ্ধতি বিষয়ে তিনি জানান, মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করা হচ্ছে। এতে মাচায় ঝুলে থাকে তরমুজ। কিছু অংশে কালো ও সবুজ রঙের তরমুজও আছে। তবে হলুদ তরমুজের সংখ্যা অনেক বেশি। এ দৃশ্য দেখতে সবাই আসছেন।

তমরদ্দি ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষক মিস্টুর ক্ষেতে থাকা তরমুজ তিন ধরনের। এর মধ্যে তৃপ্তি, ব্ল্যাকবেবি ও কনিয়া। তৃপ্তি হলুদ তরমুজের পুষ্টিগুণ বেশি, মিষ্টিও বেশি। এ এলাকার মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জসিম উদ্দন বলেন, মিস্টু এই অঞ্চলে নতুন গল্পের সূচনা করেছেন। আমরা তার সঙ্গে আছি। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আমাদের কর্মীরা প্রতিনিয়ত তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শহীদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মো. মিস্টু উদ্যমী কৃষক। তার আগ্রহ থেকেই হাতিয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো চাষ হচ্ছে হলুদ তরমুজের। হাতিয়াসহ নোয়াখালীর চরাঞ্চলের কৃষকদের এখন হলুদ ও কালো রঙের তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সব সময় ক্ষেতে গিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।

এনএ