পাকা ধান কেটে মাথায় নিয়ে কৃষকের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন আওয়ামী, যুব ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা

একদিকে, কাঠফাটা রোদ। অন্যদিকে, মাঠ থেকে ভেসে আসছে পাকা ধানের ঘ্রাণ। পাকা ধানের ঘ্রাণে মুখে হাসি ফুটলেও করোনা, রোদ, শ্রমিকের অপ্রতুলতাসহ নানাবিধ কারণে কৃষকের কপালে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। তবে ধান ঘরে তুলতে অসহায় কৃষকদের সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন ময়মনসিংহ-১০ আসনের সংসদ সদস্য (গফরগাঁও) ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল।

দেশব্যাপী করোনার কারণে শ্রমিকের মজুরি দিয়ে ধান কেটে ফসল ঘরে তুলতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক। আর তখনই কৃষকদের ধান কেটে মাড়াই করে দিতে সংসদ সদস্য বাবেল উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে ধান কেটে দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। বিনা খরচ ও কষ্টে ধান ঘরে নিতে পেরে কৃষকের মুখে হাসি ফুটছে।

এ বিষয়ে ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চলমান করোনা মহামারির বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে হতদরিদ্র কৃষক যখন শ্রমিকের মজুরি দিয়ে ধান কাটতে পারছেন না, অসহায় এই কৃষকের সোনার ফসল যাতে নষ্ট না হয় সেই উদ্যোগ নিয়েছি। আমার এলাকার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীদের অসহায় কৃষকদের ধান কেটে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা কৃষকের পাশে আছি।’

মশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা এমপির নির্দেশনা অনুসারে অসহায় কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছি। তাদের ফসল যাতে নষ্ট না হয় সেই চেষ্টা করছি।’

নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে মাসব্যাপী ধান কাটা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তারা। এরইমধ্যে গত পাঁচ দিনে গফরগাঁওয় পৌরসভা, সালটিয়া, মশাখালী এবং যশরা ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের অসহায় কৃষদের ধান কেটে মাড়াই করে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সর্বশেষ শনিবার (১ মে) গফরগাঁওয়ের ‘চর জন্মেজয়’ এলাকার অসহায় কৃষক কাজল, শামছুল এবং জালাল আহমেদের প্রায় তিন একর জমির ধান কেটে মাড়াই করে দিয়েছে গফরগাঁও উপজেলা ও পৌর যুবলীগ।

শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) নিজ খরচে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের ধামাইল গ্রামের বর্গা চাষি ফারুক ঢালী ও সজিব ঢালীর ১০৪ শতাংশ জমির ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলে দেয় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ। একই দিন সালটিয়া ইউনিয়নের রাঘাইচটি গ্রামের দরিদ্র কৃষক মো. জালালের ৮০ শতাংশ জমির ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দেয় উপজেলা ছাত্রলীগ, পৌরসভা ছাত্রলীগ ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগ।

তারা বলছেন, করোনা মহামারির বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে হতদরিদ্র কৃষক যখন শ্রমিকের মজুরি দিয়ে ধান কাটতে পারছেন না তাই আমরা ধান কেটে দিচ্ছি।

কৃষক ফারুক ঢালী বলেন, ‘প্রতি বছর ধান কাটতে গিয়ে ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়তে হয়। কারণ কামলা (শ্রমিক) পাওয়া যায় না, একা একা কাটতে হয়। এবার এমপির নির্দেশে আমার ধান এক দিনে কাটা শেষ হয়েছে। এই সহযোগিতার কথা আমরা কোনোদিন ভুলব না।’

বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিলও) বৃন্দ বখুরা গ্রামের কৃষক বাদল মিয়া, হেলাল উদ্দিন ও আবুল কালামের এক একর ৬২ শতাংশ জমির ধান কেটে দেন যশরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা।

গত ২৭ এপ্রিল বৃন্দ কান্দি গ্রামের দরিদ্র কৃষক তোফাজ্জল হোসেনের এক বিঘা জমির ধান কেটে দেন মশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মনির নেতৃত্বে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

কৃষক তোফাজ্জল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রতিবছর বৃষ্টির কারেণে অর্ধেক ধান নষ্ট হয়। এবার কোনো ক্ষতি ছাড়াই বিনা খরচে আমার ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন চেয়ারম্যান। এজন্য এমপি বাবেল ও চেয়ারম্যান মনিকে অনেক ধন্যবাদ।’

একই গ্রামের গরিব কৃষক রইছ উদ্দিন মিয়ার ২৮ শতাংশ জমির ধান কেটে দেয় মশাখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ। এছাড়াও মশাখালী ইউনিয়নের, বলদি গ্রামের অসহায় দরিদ্র কৃষক মো. আব্দুল মোতালেরের ৭০ শতাংশ জমির ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক করম উল্লাহ্ মাসুমের নেতৃত্বে একটি টিম।

গফরগাঁও উপজেলা কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ বছর গফরগাঁওয়ের ১৫টি ইউনিয়নে মোট ২১ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। এবার ২৮, ২৯ এবং হাইব্রিড জাতের ধান বেশি চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রতি হেক্টর জমিতে পাঁচ মেট্রিক টন ধান হবে। আশা করছি, এর চেয়ে বেশি হবে।’

তিনি বলেন, ‘গফরগাঁওয়ের সব জায়গাতে ধান পাকা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, কোনোরকম ঝড়-ঝাপটা ছাড়াই কৃষকরা ধান গোলায় তুলতে পারবেন।’

এমআই/এফআর