নাটোরের আম্মার আব্দুল্লাহ বিন আমিন (১৮) এখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন না। কোথাও যেতে হলে যান বাবার কোলে চড়ে। তাই আম্মার আব্দুল্লাহ এবার চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে চান। বাবার কোল থেকে নেমে নিজের পায়ে দাঁড়াতে ও হাঁটতে চান। তার বাবা আমিনুল ইসলামের জীবনের এখন একমাত্র ইচ্ছা নিজের মৃত্যুর আগে তার অসুস্থ ছেলে আম্মার আব্দুল্লাহ দাঁড়াতে ও হাঁটতে শিখেছে এমনটা দেখতে পারা।

আম্মার আব্দুল্লাহ বিন আমিন নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুরের শিবপুর খানপাড়ার আমিনুল ইসলামের সন্তান।

আমিনুল ইসলাম জানান, প্রায় ১৮ বছর আগে তার দুটি জমজ ছেলের জন্ম হয়। একটি ছেলে সুস্থ হলেও আম্মার আব্দুল্লাহ জন্মগ্রহণের সময় থেকেই মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে অক্সিজেন শূন্যতায় অসুস্থ (প্যারালাইসিস)। সে দাঁড়াতে ও হাঁটতে পারে না। এই শিশু জন্মের পর থেকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. এবি সিদ্দিকি ও শিশু বিকাশকেন্দ্রে তার অনেক চিকিৎসা করা হয়। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. অধ্যাপক কৃষ্ণ প্রিয় দাশসহ দেশের ও পার্শ্ববর্তী দেশের অনেক চিকিৎসকের কাছে সন্তানকে তিনি নিয়ে গেছেন। খরচ করেছেন নিজের উপার্জন ও জমিজমা বিক্রি করা লাখ লাখ টাকা। চিকিৎসকরা তার সন্তানের দুই পায়ের হাঁটুর নিচে কেটে ফেলে আর্টিফিশিয়াল পা লাগিয়ে দেবেন বলে জানালেও আবার জানান এই চিকিৎসাটি অনেক ব্যয়বহুল এবং ততটা নিরাপদ নয়। শেষ পর্যন্ত তিনি তার সন্তানকে গত মাসে ঢাকার মোহাম্মদপুর লালমাটিয়ায় ইলিজারভ সেন্টার কুরগান রাশিয়ার অধ্যাপক ডা. মোফাখখারুল বারীকে দেখান। ডা. মোফাখখারুল বারী জানিয়েছেন একটি অপারেশন করা হলে এক বছরের মধ্যে নিজের পায়ে হাঁটতে পারবে আম্মার আব্দুল্লাহ। আগামী জুলাই মাসের শুরুতে আম্মার আব্দুল্লাহর অপারেশন করতে চান চিকিৎসক। এতে চিকিৎসা ব্যয় হবে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।

একটি কোম্পানিতে সামান্য বেতনে চাকরি করা আমিনুল ইসলামের এখন আর সহায় সম্পত্তি নেই। এযাবৎকালে যা অর্জন করেছেন তার সবই ব্যয় করেছেন এই সন্তানের চিকিৎসায়।

ঢাকার মোহাম্মদপুর লালমাটিয়ায় ইলিজারভ সেন্টার কুরগান রাশিয়ার অধ্যাপক ডা. মোফাখখারুল বারীর চেম্বারে চিকিৎসা নিচ্ছেন আম্মার আব্দুল্লাহ বিন আমিন 

আমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার পরিবারে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া আরও দুটি সন্তান রয়েছে। এক সন্তানের চিকিৎসা ও অপর দুজনের লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি পরিবারের ভরণপোষণ চালানোর মতো সামর্থ্য আর নেই। তবুও এখন জীবনের একমাত্র ইচ্ছা অসুস্থ ছেলে আম্মার আব্দুল্লাহকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে ও হাঁটতে দেখা। সমাজের হৃদয়বান মানুষ বা কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে ১৮ বছর থেকে বাবার কোলে চড়ে দুনিয়া দেখা আম্মার আব্দুল্লাহ নিজের পায়ে দাঁড়াতে ও হাঁটতে পারবে।

এ বিষয়ে নাটোরের গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রোকসানা মোর্ত্তজা লিলি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমিনুল ইসলামকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি একটি কোম্পানিতে অল্প বেতনে চাকরি করেন। বাড়ির জায়গা ছাড়া এখন আর কোনো জমিজমা নেই। ছেলের চিকিৎসা করাতে বছরের পর বছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়িয়েছেন। কখনোই তিনি সাহায্যের জন্য কারও কাছে হাত পাতেননি। তিনি একজন আত্মমর্যাদাবান ব্যক্তি। জেনেছি, একটি অপারেশন করলে আমিনুলের ছেলে হাঁটতে পারবে, তার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারি সহযোগিতা করবো। সমাজে আরও বিত্তবান যারা রয়েছেন তাদের প্রতি আহ্বান করবো আমিনুলের ছেলের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসুন।

আম্মার আব্দুল্লাহ বিন আমিনকে সাহায্য পাঠানো যাবে ইসলামী ব্যাংক নাটোর শাখায় তার বাবা আমিনুল ইসলামের ২০৫০১৮৪০২০১৮৫৪৫০৫ সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে।

এ ছাড়া আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার নম্বর-

01755608081

01716388844

গোলাম রাব্বানী/এমজেইউ