কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ছাগল চুরির অপবাদে তিন কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আরও দুই কিশোর গত শনিবার থেকে নিখোঁজ রয়েছে। শনিবার (১ মে) দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার ৭ নম্বর শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর বুদ্ধিজীবীর মোড় নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়কে কেন্দ্র করে রামভদ্রপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবুসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সৈয়দ শামীম হোসেন (১৮), রাকিবুল ইসলাম (১৯) ও নিশাতকে (১৪) পূর্বজাফরপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ১ মে সকাল সাড়ে ১১টায় কৌশলে ডেকে রামভদ্রপুর গ্রামের বুদ্ধিজীবী মোড় নামক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর গ্রামের রুপচাঁদের ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু (৫০), মো. শাকিব (২৫), মো. শিপন (২৬), রেজাউল (৫৫), আফজার হোসেন (৬০), শুভ (২৪), হৃদয় (২৫) ও নূরনবীসহ (২৬) ওই গ্রামের কয়েকজন ৩ কিশোরকে গাছের সাথে বেঁধে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে।

চুরির স্বীকারোক্তি নিতে কিশোর তিনজনের পায়ে ইনজেকশনের সিরিঞ্জের সুচ দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণও করেছেন গ্রামের কয়েকজন যুবক।

নির্যাতনের পর বাবু মাস্টারসহ তার সহযোগীরা আহত তিনজনকে ‘ছাগল চোর’ আখ্যা দিয়ে শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদে হাজির করেন। পরে পরিষদ থেকে তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হলে পরিবারের লোকজন রাকিবুল (১৯) ও শামীম হোসেনকে (১৮) চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

একই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার নিশাত (১৪) তার নিজ বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় কাতরাচ্ছে। তবে গ্রামের মাতব্বদের নির্যাতনের ভয়ে নিখোঁজ রয়েছে নাঈম (১৪) ও নূর আলম (১৫) নামে দুই কিশোর।

সৈয়দ শামীম হোসেন ও রাকিবুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করেই বাবু মাস্টারসহ তাদের লোকজন আমাদের মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। পরে ছাগল চুরির অপবাদে পৈশাচিক নির্যাতন চালায়।

তারা আরও বলেন, নির্যাতন সইতে না পেরে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে চুরির অপবাদ স্বীকার করতে হয়েছে। কিন্তু আমরা চুরি সম্পর্কে কিছুই জানি না। পরে তারা পাশের কলাবাগানে নিয়ে গলায় চাকু ধরে পায়ে সুচ দিয়ে খোঁচাতে থাকে।

রাকিবুলের বাবা মোমিনুল ইসলাম বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমার ছেলেসহ তিনজনকে ছাগল চোর সাজিয়ে বর্বর নির্যাতন চালায় বাবু মাস্টারসহ তার লোকজন। ছেলেকে ধরে নির্যাতন করা হচ্ছে জেনে ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও মারপিট করা হয়।

নিখোঁজ নাইমের মা শাহানুর বানু বলেন, বাবু মাস্টারসহ তার লোকজন গত ১ মে মিথ্যা ছাগল চুরির অপবাদে তিন কিশোরকে মারপিট করেছে। এ ঘটনার পর থেকে আমার ছেলে নাইম নিখোঁজ রয়েছে। আমার ছেলের কিছু হলে এর জন্য বাবু মাস্টারসহ তার লোকজন দায়ি থাকবে।

অপরদিকে মারপিটের ঘটনার পর ওই রাতেই গ্রাম্যসালিস বসে। সেখানে নিখোঁজ দুই কিশোরকে তিন দিনের মধ্যে হাজির হওয়ার করার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দেন মাতব্বররা। হাজির করতে ব্যর্থ হলে জরিমানা হিসেবে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সালিস শেষে ওই রাতেই আহত নিশাদের নানির একটি গাভি ও নিখোঁজ নূর আলমের বাড়ি থেকে একটি চার্জার রিকশাভ্যান নিয়ে যায় মাতব্বরদের লোকজন।

ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব বলেন, তার নির্দেশে বাদল মেম্বার ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করা দুই কিশোরকে নিজ নিজ অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টার বলেন, মারপিট করা ভুল হয়ে গেছে। আমি সার্ভিস করি আমার যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। 

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফখরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ আমার হাতে আসেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাহাবুর রহমান/এমএসআর