বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে তীব্র হয়ে উঠেছে নদীভাঙন। ভাঙনের কবলে পড়ে ঘর-বাড়ি ও ফসল সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। হুমকিতে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। 

সরেজমিন দেখা গেছে, তীব্র স্রোতে বইছে তিস্তা। স্রোতের তোরে ভাঙছে পাড়। ভাঙনের কবলে পড়ে ঘর-বাড়ি ও ক্ষেতের ফসল সরিয়ে নিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। দেবে গেছে তীর রক্ষা স্পারের পাশে ফেলা জিওব্যাগ।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালিরমেলা এলাকায় তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষজন। তিস্তার পানি বাড়ায় এমন দৃশ্য রাজারহাটের ঘড়িয়াল ডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখা, বুড়িরহাটসহ উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন ভাঙন কবলিত এলাকার। 

ভাঙন কবলিতরা জানান, বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ জনপ্রতিনিধিদের জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙনে ভেসে গেছে কারো ঘর আবার কেউ কেউ সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের ঘর-বাড়িসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

রাজারহাটের কালিরমেলা এলাকার তিস্তা পাড়ের কুদ্দুস আলী জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার তীব্র ভাঙনে আমার একটি ঘর নদীতে চলে গেছে। রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বাকী ঘর সরিয়ে নিচ্ছি কিন্তু যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।

একই এলাকার সবুজ জানান, বাড়ির গাছপালা ঘর সব সরিয়ে নিচ্ছি। না সরালে রাতেই সব নদীতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছর কিছু জিওব্যাগ ফেলেছিল কিন্তু সেগুলো পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার নদীর কাজ না করায় আমাদের এ অবস্থা।

রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, তিস্তার পানি বাড়ায় আমার ইউনিয়নের অসংখ্য ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। অনেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।

তিস্তার ভাঙনে অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে হুমকিকে থাকা ঘর-বাড়ি, ফসলি জমিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংসদ সদস্যকে অবগত করার কথা জানান ইউপি চেয়ারম্যান।

স্থানীয়রা জানান, গত একমাসে রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়াল ডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়েছে প্রায় শতাধিক ঘর-বাড়ি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, তিস্তার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি তিস্তার স্থায়ী ভাঙন রোধে চলমান সমীক্ষা শেষ হলে কাজ করা হবে। এ ছাড়া উজানের ঢল ও স্থানীয়ভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও।

মো. জুয়েল রানা/এমজে