‘নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে অনেক কষ্টে কেটেছে আমাদের সময়। এ সময়ে সংসারের খরচ মেটাতে অনেকের কাছে ঋণ করেছি। ভেবেছি ইলিশ ধরে ঋণ শোধ করতে পারব। কিন্তু এখন নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। বড় সাইজের ইলিশের আকাল। যা পাওয়া যায়, তা বিক্রি করে নৌকার ভাগীদারদের দিয়ে আর কিছুই থাকে না।’

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে এমন কথাই জানালেন চাঁদপুর সদরের আনন্দবাজার এলাকার জেলে ইদ্রিস মিয়া।

দীর্ঘ দুই মাস নিষেধাজ্ঞার পর শুক্রবার (১ মে) মধ্যরাত থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসছেন অনেক জেলেই। দীর্ঘক্ষণ নদীতে জাল ফেলে যে পরিমাণ মাছ পাচ্ছেন, তা দিয়ে খরচের টাকাও উঠছে না বলে দাবি করছেন জেলেরা। তবে গবেষকরা বলছেন, এখন পর্যাপ্ত ইলিশ জালে না পেলেও কিছুদিন পর ঠিকই কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা পাবেন জেলেরা।

শহরের বড়স্টেশন এলাকার মনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় অনেক আশা নিয়ে মধ্যরাতে নৌকা নিয়ে নদীতে নামি। কিন্তু সারা রাত জাল টেনে যে পরিমাণ ইলিশ পেয়েছি, তাতে নৌকার খরচের টাকাই ওঠাতে কষ্ট হবে। ভেবেছি জালে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাব, হয়েছে তার উল্টো।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আড়মোড়া দিয়ে জেগে উঠেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ ইলিশের আড়ত বড়স্টেশন মাছঘাট। কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে আড়তের মাছ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মাঝে। সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে ইলিশ মাছের ট্রলার ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা।

বড়স্টেশন মাছঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ী মো. রুবেল গাজী বলেন, দীর্ঘ দুই মাস পর আবারও চিরচেনা পরিবেশ ফিরে এসেছে মাছঘাটে। যদিও ইলিশের আমদানি অনেক কম। তবু আমরা কাজে ফিরতে পেরে অনেক খুশি। আশা করি সামনে ইলিশের আমদানি বাড়বে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, ঘাটে ইলিশের আমদানি অনেক কম। নিষেধাজ্ঞার পর থেকে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মণ ইলিশ এসেছে। তাও বড় ইলিশ নেই। আমদানি করা ইলিশের সাইজ ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রামের, যা মণপ্রতি ১৪ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রখ্যাত ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, মূলত এখন ইলিশের মৌসুম নয়। এই সময়টায় জেলেরা কিছু কিছু করে ইলিশ পেতে থাকবেন। মূলত ইলিশ প্রাপ্তিটা হবে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে পানিপ্রবাহ বাড়ার সময়। আশা করি আগামী জুলাই মাসের শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ জেলেদের জালে ধরা দেবে।

তিনি বলেন, এ বছর মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সফল হওয়ায় ইলিশের উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকবে। আশা করি এ বছর ইলিশের উৎপাদন ৬ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছাবে, যা গত বছর ছিল প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন।

উল্লেখ্য, ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। ইলিশ রক্ষায় জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় এই দুই মাস চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকা নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। ২০০৬ সাল থেকে চাঁদপুরের বিস্তীর্ণ নদীসীমাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে।

শরীফুল ইসলাম/এনএ