সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলছে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

প্রকল্প কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের দ্বন্দ্বের জেরে সোনারগাঁয়ের পেচাইন খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে ৩০ গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন।

জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সেতু/কালভাট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মবাওগা থেকে রাউৎগাও রাস্তার পেচাইন খালের ওপর ৩৬ ফুট লম্বা সেতু নির্মাণের বরাদ্দ আসে। মেসার্স মোহাম্মদ বির্ন্ডাস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৮ সালে জুলাই মাসে প্রায় ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ কাজটি দেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। মোহাম্মদ বির্ন্ডাসের প্রোপাইটর হানিফ মহসিন সুজন বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণ কাজ শুরু করেন। 

নির্মাণ কাজের প্রায় ৩০-৪০ ভাগ শেষ হলে তিনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে বিল চান। এখন বিল পরিশোধ করা যাবে না- প্রকল্প কর্মকর্তার এমন সিদ্ধান্তে ঠিকাদার মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বেশ কিছু দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময় সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। সুস্থ হয়ে তিনি পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করতে চাইলে প্রকল্পের মেয়াদ কিছু দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে কর্মকর্তা বাধা দেন। 

ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দ্বন্দ্বে ৩০টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পেচাইন খালের ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকির্পূণভাবে চলাচল করছেন। বর্ষা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করাঝুঁকির্পূণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তাদের স্কুল, মাদরাসায় পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন।

রাউৎগাও গ্রামের বকুল হোসেন (৬৫) বলেন, এই সেতুর জন্য ছেলেমেয়েকে ঠিকমতো লেখাপড়া করাতে পারছি না। বাঁশের সাঁকো দিয়ে বাচ্চারা একা পারাপার হয়ে স্কুলে যেতে পারে না। তাই অনেকেই পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছে।

স্থানীয় মোক্তার হোসেন বলেন, বাঁশের সাঁকোটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। সেতু থেকে পড়ে অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে। দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, র্দীঘ দিন ধরে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় অনেক কষ্টে বাঁশের সাঁকো দিয়ে মাথায় করে দোকানের মালামাল আনতে হয়। রাস্তাটিও কাঁচা, একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

মাদরাসার শিক্ষার্থী আরবী (৮) বলেন, বাঁশের সাঁকো থেকে কয়েকদিন পড়ে গেছি। অনেক ব্যথা পেয়েছি। তাই বাবা মাদরাসায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী জাহান বলেন, ঠিকাদার অনেক টাকা খরচ করে সেতুর নিচের অংশের কাজ করেছে। জেনেছি টিকাদার বিল না পাওয়ায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

ঠিকাদার হানিফ মহসিন সুজন অভিযোগ করে বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সেতুর কাজ শুরু করে প্রায় ৪০ ভাগ কাজ সর্ম্পূণ করেছি। প্রকল্প কর্মকর্তার স্বার্থের জন্য বিল পরিশোধ করেনি। যদি আমাকে অনুমতি দেয় তাহলে দ্রুত সেতুর নির্মাণ কাজটি সর্ম্পূণ করে দিব।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, আমার যোগদানের আগে এই সেতুর বরাদ্দ হয়েছে। তবে জেনেছি নির্দিষ্ট সময়ে মোহাম্মদ বির্ন্ডাস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে সেতু নির্মাণের কোন সুযোগ নেই।

শেখ ফরিদ/এসপি