মাদরাসাশিক্ষক নজরুল ইসলাম

ইফতার করে ফ্রিজের তরমুজ খেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হলেন। ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ দিনের মাথায় মারা গেলেন মাদরাসাশিক্ষক নজরুল ইসলাম (৪৫)।

বুধবার (০৫ মে) বিকেলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নজরুল ইসলাম পাবনা শহরের পৌরসভাধীন সিংগা এলাকার মাজহারুল ইসলামের ছেলে ও পাবনা ইসলামিয়া মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় ইফতার করে মাগরিবের নামাজ পড়ে ফ্রিজে রাখা তরমুজ খেয়ে অসুস্থ হন নজরুল। এরপর সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন। অসুস্থ অবস্থায় তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

শনিবার (০১ মে) করোনা পজিটিভ আসে তার। পরে তাকে হাসপাতালের আইসোলেশনে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার (০৪ মে) ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুকালে বাবা-মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন নজরুল ইসলাম। তার মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।

পাবনা ইসলামিয়া মাদরাসার ইংরেজি শিক্ষক আব্দুল্লাহ আরিফ বলেন, ৬-৭ দিন দেখা না পেয়ে খোঁজ নিলে পরিবার থেকে জানানো হয়; তরমুজ খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরপর করোনা শনাক্ত হয়। আজ শুনলাম না ফেরার দেশে চলে গেছেন। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কাঁধে একমাত্র ছেলের লাশ; সবচেয়ে ভারী বোঝা। সহকর্মীকে হারিয়ে শোকে কাতর আমরা।

নজরুল ইসলামের বাবা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ফ্রিজের তরমুজ খেয়ে অসুস্থ হয়ে আমার আগে ছেলে চলে যাবে কোনোদিন ভাবিনি। আজকে আমার কলিজার টুকরা চলে গেল। পৃথিবীতে আমি একা হয়ে গেলাম। ছেলের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। তরমুজটাই কাল হলো।

পাবনা ইসলামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ ইকবাল হোসাইন বলেন, অত্যন্ত ভালো একজন সহকর্মীকে আমরা হারালাম। ক্লাসে দক্ষতার সঙ্গে পাঠদান করতেন। কোনোদিন ক্লাস মিস করতেন না। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাবনায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৩৫ জন। এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ২২৪ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১৮ জন। হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৯৩ জন।

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল মোমেন বলেন, নজরুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষক করোনায় মারা গেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে পাবনায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন হচ্ছে। আমরা একটি মেশিনের অনুমোদন পেয়েছি। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যেই ল্যাব স্থাপন করতে পারব।

রাকিব হাসনাত/এএম