দেশজুড়ে হওয়া সহিংসতায় সাভারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পশু হাসপাতালেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আবদুর রহমান।

তিনি বলেছেন, ‘এই কার্যালয়টিতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ গাড়িতে যেভাবে আক্রমণ করেছে তাতে মনে হয়েছে, এদের সঙ্গেই তাদের একটা যুদ্ধ ছিল। তারা এদের সঙ্গেই যুদ্ধ করেছে।’

শনিবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় ৭ টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সরেজমিনে গিয়ে কার্যালয়ের ভেতরে আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি গাড়ি, কার্যালয়ের ভেতরে অফিসকক্ষের ভাঙচুর হওয়া আসবাপত্র ও পুড়ে যাওয়া কাগজপত্র  ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনার আট দিন পর হাসপাতালের পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান মন্ত্রী।

আব্দুর রহমান বলেন, এটা দেখে তো কোনো কিছু বর্ণনা করার ভাষা নেই। একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলছিলেন, আমরা ৭১ সাল দেখি নাই। কিন্তু ওই দিন আমরা নতুন করে ৭১ সাল দেখলাম। সেদিন তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল প্রাণিসম্পদ সাভারের এই অফিসটি। অফিসটিতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ অফিসের গাড়ি পুড়ানো হয়েছে যেভাবে এবং আক্রমণ পরিচালিত করছে, তাতে মনে হয়েছে এদের সঙ্গেই তাদের যুদ্ধ ছিল এবং তাদের সঙ্গেই যুদ্ধ করেছে।

কার্যালয়ে ভাঙচুরের ভয়াবহতা বোঝাতে তিনি বলেন, এটা ভাবা যায় একটি অফিসের কর্মকর্তার কক্ষের যে কমোড সেই কমোডটা পর্যন্ত ভেঙে চুরমার করেছে। আলমারি, ফ্রিজ, এসি, টেবিল চেয়ার এগুলো নিঃশেষ করেছে। সুতরাং এটি আর বলার আমাদের আর ভাষা নাই।

স্বাধীনতা বিরোধীরা এ তাণ্ডব চালিয়েছে মন্তব্য করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, এই নারকীয় তাণ্ডব যারা করেছে, তাদের চেহারা, তাদের চরিত্র এটি ৭১ সালকে যদি মনে করিয়ে দেয়, সুতরাং তাদেরই উত্তরসূরী এরা, সেই পরাজিত শক্তিরই উত্তরসূরীরা এই আক্রমণ চালিয়েছে।

সহিংসতার বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে এই দেশের মুক্তিকামী, স্বাধীনতাকামী জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এই সহিংসতা বাংলাদেশে হতে পারে না, এই বাংলাদেশ শান্তিকামী মানুষের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ  মুক্তিকামী, স্বাধীনতা যুদ্ধের যে মূল্যবোধ ধারণ করে যে বাঙালি জাতি, সেই বাঙালি জাতির স্বপ্নের বাংলাদেশ।

শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা অনুমান করেছি ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা সাভারের প্রাণিসম্পদ অফিসে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুতরাং এইগুলো সঠিকভাবে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যাতে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করতে পারে, সেগুলো তারা সম্পূর্ণ করবেন। ইতোমধ্যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার হয়েছে এই ঘটনায়। তাদের ভেতর থেকে চার জনের কাছ থেকে কিছু মালামাল উদ্ধার করেছে। সুতরাং এই ঘটনার সাথে জড়িত করা এবং এই ঘটনা ঘটনোর উদ্দেশ্য কি ছিল, সবকিছু পরিষ্কার হতে পারব। সর্বোপরি এই ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে আমরা যথাসম্ভব খুব শিগগিরই পুনরায় এটায় স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করব।

এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক, সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলামসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকার সাভারে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে গত ১৯ জুলাই সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পশু হাসপাতালে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

টিএম