ফরিদপুরে আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের ব্যক্তিগত কার্যালয় সংলগ্ন জায়গায় রাখা বাসগুলোর মধ্য থেকে ছয়টি বাস রহস্যজনক আগুনে পুড়ে গেছে। বাসগুলো শহরের বদরপুর এলাকার অবস্থিত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ফরিদপুর কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে রাখা ছিল।

সোমবার (২৯ জুলাই) রাত ১০টার দিকে ছয়টি বাসে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফরিদপুর দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুন নেভায়।

আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেওয়া ফরিদপুর দমকল বাহিনীর জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা সুভাষ বাড়ই বলেন, ওই খানে এর আগে আগুনে পোড়া বেশ কয়েকটি বাসসহ ছয়টি অক্ষত বাস রাখা ছিল। সেগুলোই পুড়ে গেছে। কীভাবে এ আগুন লাগার ঘটনা ঘটল তা শনাক্ত করা যায়নি। রহস্যজনক বিধায় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

সাজ্জাদ হোসেন বরকত ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেল ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। তারা দুজনই ছিলেন ফরিদপুর-৩ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশারর‌ফ হোসেনের ঘনিষ্টজন। ২০২০ সালের ৭ জুন রাতে তাদের গ্রেপ্তার করার পর তাদের দুই জনকে স্ব স্ব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

২০২০ সালে ঢাকার কাফরুল থানায় সিআইডির অর্থ পাচার মামলার শুরুর আগে থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বরকত ও রুবেল গ্রেপ্তার রয়েছেন। 

এ অর্থ পাচার মামলার  সম্পূরক  অভিযোগপত্র গত ২২ এপ্রিল আদালত গ্রহণ করেন। ওই অভিযোগপত্রে বরকতের স্ত্রী আফরোজা পারভীন ও রুবেলের স্ত্রী সোহেলী ইমরোজকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে পলাতক রয়েছেন বরকত ও রুবেলের স্ত্রীরা। তাদের 
 মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় নতুন করে দুটি বাস পোড়ার বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

প্রসঙ্গত, অর্থপাচার মামলায় আদালতের মাধ্যমে বরকত ও রুবেলের ২২টি যাত্রীবাহী বাস আলামত হিসেবে জব্দ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঢাকা। জব্দ করা বাসগুলো রক্ষণাববেক্ষণের দায়িত্বে ছিল জেলা পুলিশ। এ বাসগুলো প্রথমে শহরের গোয়ালচামটস্থ ওজোপডিকো কার্যালয়ের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে পশ্চিম গোয়ালচামট মহল্লায় সাজ্জাদ হোসেন বরকতের মালিকানাভুক্ত জায়গায় রাখা হয়। বাসগুলো ১০টি সেড দিয়ে ঘেরা ছিল এবং ১২টি ওই জায়গার পাশে নিচু ভূমিতে রাখা ছিল। 

২০২২ সালের ১২ মার্চ রাত দেড়টার দিকে ওই ২২টি বাসের মধ্যে ১২টি বাস পুড়ে যায়। এরপর বরকতের পরিবারের পক্ষে থেকে পোড়াবাসসহ বাকি বাসগুলো এলজিইডি অফিসের পাশে বরকতের অফিসসংলগ্ন বর্তমান জায়গায় রাখা ছিল। এ বাসগুলো বরকত ও রুবেলের মালিকানায় সাউথ লাইন পরিবহন এর বাস হিসেবে চলাচল করতো। ওই সময় বরকত-রুবেলের বাস পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পরিদর্শক আব্দুল গফফার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে একটি মামলা করেন। 

জহির হোসেন/আরকে