ধানের জন্য বিখ্যাত জেলা নওগাঁ। এ জেলায় এখন চলছে ধান কাটার উৎসব। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ যখন দিশেহারা, শ্রমিক-সংকটে দরিদ্র কৃষকরা যখন ধান কাটাতে পারছেন না, সে সময় এক অসহায় কৃষক বাবার পাশে দাঁড়াল তার শিশুসন্তান।

সোমবার (৪ মে) নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর দাসড়া গ্রামের মোহাম্মদ মাহবুব জামালের ছেলে আবদুল শহিদ রহমান (১১) ধান কেটে বাবাকে সহযোগিতা করে প্রশংসায় ভাসছে।

আবদুল শহিদ চকরাজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

এ প্রসঙ্গে তার বাবা মাহবুব জামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলার ভীমপুর দক্ষিণ দাসড়া গ্রামের মুসলিমের ১০ কাঠা জমি বর্গা নিই। সেখানে চলতি মৌসুমে কাটারিভোগ ধান রোপণ করি। আল্লাহর রহমতে ফসল ভালো হয়েছে। সেই জমিটুকুর ধান কাটার দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারছিলাম না। আমার ছেলে আমাকে বলে, টাকা নাই তো কী হইছে? বাপ-বেটা দুজন মিলে ধান কেটে নিয়ে আসব। ছেলেটির সাহসেই সকালে মাঠে গিয়ে ধান কাটা শুরু করি।

তিনি বলেন, ধানকাটা শ্রমিক নেওয়ার সামর্থ্য নেই আমার। তাই ছেলের সহযোগিতা নিয়ে ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। করোনার কারণে ছেলের বিদ্যালয় বন্ধ। কোচিং বা প্রাইভেট পড়ানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই। তাই বাড়িতে একাই লেখাপড়া করছে বলে জানান তিনি।

আবদুল শহিদ রহমান ঢাকা পোস্টকে বলে, আমার বাবার কোনো জমি নেই। মানুষের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। ধান কাটার জন্য যেটুকু টাকা দরকার, সেটুকু টাকা আমার বাবার নেই। সামনে কালবৈশাখী ঝড় আসছে। এই ঝড়ে ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ জন্য আমি বাবার সঙ্গে ধান কাটার কাজ করছি।

  
ভীমপুর চকরাজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাব হোসেন মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা মহামারি সময়টুকুতে সব শিক্ষার্থী ঘরে থাকার কথা। সে সময়ে এতটুকু বয়সে পিতাকে সহযোগিতা করছে। আমি ওর এমন আচারণে মুগ্ধ। স্কুল পরীক্ষায় মেধাস্থান তার দখলে। অসহায় বাবার পাশে দাঁড়ানোর ক্ষুদ্র এই প্রয়াস ভবিষ্যতে আরও মহৎ কিছু করার ইঙ্গিত বহন করে বলে জানান তিনি।

উপজেলার ভীমপূর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শ্রী রাম প্রসাদ ভদ্র ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই এলাকায় অর্থের অভাবে ধান কাটতে পারছেন না কেউ, এমন সংবাদ আমার কাছে নেই। আবার শ্রমিক হিসেবে শিশুদের দিয়ে ধান কেটে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে, এমন সংবাদ কেউ আমাকে অবগত করেনি।

তিনি বলেন, লকডাউনের ফলে অনেকেই কষ্টের মধ্য দিন কাটালে লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারেননি, এমনও ঘটনা ঘটতে পারে। দ্রুত খোঁজ নিয়ে পরিষদের পক্ষে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

এনএ