নাঈম হোসাইন

পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে মাদরাসা বোর্ড থেকে বৃত্তি পাওয়া নাঈম হোসাইনের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু তার সেই উজ্জ্বল স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ (Rheumatic heart disease)-এ আক্রান্ত হয়ে তার হার্টের বাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি এখন শয্যাশায়ী। তার বাবা মুদি দোকান বিক্রি করে চিকিৎসা বাবদ এ পর্যন্ত খরচ করেছেন ১০ লাখ টাকা। উন্নত চিকিৎসার জন্য আরও প্রয়োজন ১০ লাখ টাকা, যা তার বাবার পক্ষে একেবারে অসম্ভব।

পরিবার সূত্র জানায়, নাঈমকে চিকিৎসার জন্য ভারতের বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও কলকাতায় নেওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত সাতবার। সর্বশেষ চেন্নাইয়ের ভেলোর থেকে স্থানান্তর করা হয় কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে। এখানকার হেমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা বলেছেন, নাঈমের হার্টের বাল্ব পরিবর্তন করতে হবে জরুরিভাবে। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকার কারণে প্রতি মাসে একবার ইনজেকশন নিতে হবে। বাল্বটি দ্রুত পরিবর্তন না করলে ইনফেকশন ছড়িয়ে যাবে শরীরে।

নাঈম সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা গিয়ে ইনজেকশন নিয়ে এসেছেন। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণে আর যেতে পারেননি। ফলে রমজান মাসের প্রথম দিন আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি বাড়িতে শয্যাশায়ী।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার পূর্ব নান্দিকাঠি খান বাড়িতে থাকেন নাঈম। পরিবারে আছে তার বাবা, মা ও আর দুই বোন। তার বাবা মহসিন খান বর্তমানে বিক্রি করা দোকানটি আবার ভাড়ায় নিয়ে সংসার পরিচালনা করেন।

মহসিন খান ঢাকা পোস্টকে জানান, স্টেশন রোড এলাকায় থাকা চায়ের দোকানটি ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন আগেই। এ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকার ওপর খরচ করেছেন। হার্টে নতুন বাল্ব বসানোসহ আনুষঙ্গিক অন্তত আরও ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন জরুরিভাবে। যা ব্যয় করা তার পক্ষে অসম্ভব। সমাজের সবার সহযোগিতা চান তিনি।

জানা যায়, পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় নাঈম চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা করতেন। সে মোতাবেক পড়াশোনা করে ২০১৬ সালে ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় (এসএসসি) বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছেন জিপিএ-৫। এরপরই অসুস্থতা শুরু হলে টানা দুই বছর পড়াশোনা ছিল বন্ধ। অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে আবার শুরু করেন পড়াশোনা। ২০২০ সালে নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় (এইচএসসি) জিপিএ-৫ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। অসুস্থতার কারণে মা-বাবা তাকে এইচএসচিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে দেননি। তাই মানবিক বিভাগ থেকেই পাস করেন তিনি।

ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদরাসার সাবেক শিক্ষার্থী ও নাঈমের বন্ধু-সহপাঠী খালিদ সাইফুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাঈম পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিল ‘তারুণ্যের নলছিটি ইয়ুথ অর্গানাইজেশন’ নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে। সেই সংগঠন থেকে নাঈমের চিকিৎসা তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও নাঈম বাঁচতে আমরা সহযোগিতা করতে পারি না? সে কি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়তে পারবে না?

নাঈমের বন্ধু মারুফ বিল্লাহ তানিম বলেন, সবার কাছে অনুরোধ, এ বছর জাকাত ও এই রমজান মাসে আদায় করা যেকোনো দানের একটি অংশ এ তহবিলে প্রদান করলে নাইমের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে। সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই এক টাকা বা একশ টাকা করে দিলেও তার চিকিৎসার খরচ উঠে আসবে।

কায়েদ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডক্টর ফয়জুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, টাকার কাছে যেন কোনো জীবন হেরে না যায়। তাই নাঈমকে বাঁচানোর জন্য তহবিল গঠনে তিনি দেশের সবাইকে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা পোস্টের মাধ্যমে।

নাঈমকে সাহায্য পাঠাতে চাইলে- ব্যাংক হিসাব: মহসিন খান, ৪০১৪১০১০০৮৮৭১, পূবালী ব্যাংক, ঝালকাঠি ব্রাঞ্চ। মোবাইল : মহসিন খান: ০১৭২৮৩২৮৮০১, নাঈম হোসাইন : ০১৫৮০৫১২০৪৪ নম্বরে পাঠাতে পারেন।

এনএ