বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে আরও ১৪ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারিসহ বিভিন্ন শর্ত দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে স্থলপথে চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। ভ্রমণের বিশেষ ছাড়পত্র আছে এমন পাসপোর্টধারী যাত্রীরা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করার সুযোগ পাবেন। 

এর আগে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ০৯ মে পর্যন্ত ১৪ দিন স্থলপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ভারতফেরত যাত্রীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় আবারও ১৪ দিনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

রোববার (০৯ মে) দুপুরে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের (ওসি) আহসান হাবিব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এদিকে দিন দিন ভারতে করোনা নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বেড়েই চলছে।  শেষ পর্যন্ত তার ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশে। ভারতফেরতদের মধ্যে ছয়জন যাত্রীর শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশজুড়ে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রথম নিষেধাজ্ঞার পর গত ১৩ দিনে ভারত থেকে ফিরেছে ২ হাজার ৫৬০ জন বাংলাদেশি। এদের  মধ্যে  ১৭ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এই যাত্রীরা ভারতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। আক্রান্ত যাত্রীরা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে যশোর করোনা রেড জোনে রয়েছে।

জানা যায়, ভারতে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে। এতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সরকার গত ২৬ এপ্রিল ভারতের সঙ্গে স্থলপথে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত ১৪ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। শর্ত দেওয়া হয়ে- যাদের ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশি দূতাবাসের ছাড়পত্র থাকবে তারা ফিরতে পারবেন। পরে  শোনা যায় যাদের ভিসার মেয়াদ নিষেধাজ্ঞার ১৪ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে তারাই এ সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু মাসের অধিক সময় ভিসার মেয়াদ আছে এমন মেডিকেল ও বিজনেস ভিসার যাত্রীরা নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিক থেকেই ফিরছিলেন। 

বাংলাদেশে যে সব ভারতীয়রা নিষেধাজ্ঞার আগে এসে আটকা পড়েছিল তারাও ফিরছেন ভারতে। সম্প্রতি যেসব বাংলাদেশিরা ভারত থেকে ফিরছেন তারা অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ফিরছেন। আবার দেশে এসেও করোনা পজিটিভ হচ্ছেন। এমন অবাধ যাতায়াতের সুযোগে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। 

তবে এবার দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞায় ১৪ দিনের বেশি মেয়াদে ভিসা থাকা যাত্রীরা যাতে না ফিরতে পারে সে নির্দেশনা রয়েছে। ভারতে লেখাপড়া করতে যাওয়া  ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম কিছুটা শিথিল রয়েছে। এছাড়া যারা ভারতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের আপাতত দেশে ফেরা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউছুফ আলী জানান, করোনা আক্রান্ত যাত্রীদের যশোর সদর হাসপাতালের করোরা ইউনিটের রেড জোনে রাখা হয়েছে। অনান্য যাত্রীদের বেনাপোল, যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ১৪ দিন পর শঙ্কামুক্ত হলে যাত্রীরা কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়ি ফিরতে পারবেন। কোয়ারেন্টাইন খরচ যাত্রীদের বহন করতে হচ্ছে।

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে প্রবেশ করেছে। যদি এটা নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে ফলাফল মারাত্মক ভয়াবহ হবে। ইতোমধ্যে ভারত বাংলাদেশে অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থাই এ মহামারি থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে।

বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, প্রতিদিন ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে  ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করছে। এই চালকদের মাধ্যমে যাতে করোনা না ছড়ায় সেজন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি আহসান হাবিব জানান, আবারও ১৪ দিনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নতুন করে কোনো পাসপোটধারী যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করছে না। তবে নিষেধাজ্ঞার আগে যারা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আটকা পড়েছিল তারা ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ছাড়পত্র নিয়ে দেশে ফিরছেন। এখন থেকে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।

যশোরের জেলা প্রশাসক তামিজুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনার ভয়াবহ অবস্থা। ভারতফেরত যেসব বাংলাদেশি যাত্রীর করোনা শনাক্ত হয়েছে তারা ভারতে থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে কারও করোনা শনাক্ত হয়নি। বিশেষ অনুমতিতে প্রতিদিন ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি যাত্রীরা ফিরছেন। তাই সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায়। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। 

আতাউর রহমান/আরএআর