শিশুসন্তানকে নিয়ে গাড়ির অপেক্ষায় আমেনা
পঞ্চগড়ের বোদা থানার কাজলদিঘী গ্রামের আমেনা বেগম (৩৫)। স্বামীসহ গাজীপুরে কালিয়াকৈর এলাকায় একটি মুরগির ফার্মে কাজ করতেন। তবে সেখানে যে বেতন পেতেন তাতে সংসার চলত না। তাই চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে। কালিয়াকৈর থেকে ভেঙে ভেঙে কোন রকমে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারলেও সেখান থেকে কোন দূরপাল্লার বাস কিংবা যানবাহন পাচ্ছেন না। শুধু আমেনা নয়, এরকম শত শত ধান কাটার শ্রমিক ও নিম্নআয়ের মানুষজন উত্তরবঙ্গে যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষায় রয়েছেন।
সোমবার (১০ মে) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় স্বামী-সন্তান নিয়ে সকাল ৭টা থেকে বসে আছেন আমেনা বেগম। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে। আমেনা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাতে সাহরি খেয়ে কালিয়াকৈর থেকে রওনা দিয়েছি। বিভিন্ন মাধ্যমে এলেঙ্গা পর্যন্ত এসেছি। তাতে প্রায় ১২শ টাকা খরচ হয়েছে। এলেঙ্গায় গাড়ির অপেক্ষায় ৫ ঘণ্টা ধরে একই স্থানে বসে আছি। কিন্তু বাসতো দূরের কথা, ট্রাকও পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা নেই তাই মাইক্রোতে যেতে পারছি না।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, পঞ্চপড় যেতে তিন হাজার ভাড়া চায়। আমরা পাবো কোথায় এতো টাকা? চাকরিও ছেড়ে দিয়েছি। এখন কোথায় যাবো শিশুসন্তান নিয়ে। সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে কিন্তু গরিবের চিন্তা করে না। গাড়ি না পেলে এখানেই বসে থাকতে হবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
পঞ্চগড়ের বাসিন্দা সুজন নামে এক ধান কাটা শ্রমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৫ দিন হলো ধান কাটার কাজে এসেছি টাঙ্গাইলে। এই কয় দিনে ৬ হাজার টাকা উপার্জন হয়েছে। কিছু টাকা রেখে বাকি টাকা বাড়িতে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি। ৫শ টাকা কাছে ছিল। যেখানে ধান কাটতাম সেখান থেকে আসতে একশ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পঞ্চগড় যেতে ট্রাকে ভাড়া চাচ্ছে ৫-৬শ টাকা। কিভাবে বাড়িতে যাবো চিন্তায় পরেছি।
বিজ্ঞাপন
মহাসড়কে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত নিম্ন আয়ের এসব মানুষ বলেন, সরকার লকডাউন দিছে কিন্তু গরিবের জন্য ভাবেনি। কাজ করতে এসে এখন বাড়ি ফিরতে পারছি না। বাড়ির মানুষ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কখন বাড়িতে যাব।
এদিকে সোমবার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে গাড়ির চাপ রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রোববার (০৯ মে ) সকাল ৬টা থেকে সোমবার (১০ মে) সকাল ৬টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ৩২ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকা।
অভিজিৎ ঘোষ/এসপি