ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হওয়া সহিংসতার সময় পুলিশ ‘নিষ্ক্রিয় ছিল’ বলে অভিযোগ তোলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। 

সহিংসতার সময় পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকলে এত বড় ঘটনা ঘটত না বলে মনে করেন সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরাও। এবার সেই ‘নিষ্ক্রিয় পুলিশে’ বদলির হিড়িক পড়েছে। গত ১৬ দিনে পুলিশ পরিদর্শক পদ মর্যাদার ৫ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তাণ্ডবের এক মাস পূর্ণ হওয়ার দিনে গত ২৬ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুর রহিমকে পুলিশ সদর দফতরের এক আদেশে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। 

এরপর ২৭ এপ্রিল পুলিশ সদর দফতরের পৃথক দুটি আদেশে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আলাউদ্দিন চৌধুরীকে সিলেট রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) এবং খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মো. সাখাওয়াত হোসেনকে গাজীপুরে বদলি করা হয়।

গত ৯ মে সরাইল থানা পুলিশের ওসি নাজমুল আহমেদকে বদলি করে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইশতিয়াক আহমেদকেও বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে জেলার নাসিরনগর থানার চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ করা হয়েছে।

জনস্বার্থে বদলির কথা বলা হলেও ওই পাঁচ কর্মকর্তার কর্তব্যরত থানা এলাকাগুলোতে ব্যাপক তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেছে। আশুগঞ্জ উপজেলায় তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। আশুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদও বদলি হতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।

এছাড়াও তাণ্ডবের সময় সদর মডেল থানায় হামলা না করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বিক্ষোভকারীদের কাছে অনুরোধ জানানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে প্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিদর্শনে এসে অপেশাদার ও বিশৃঙ্খল লোকদের পুলিশে প্রয়োজন নেই বলে জানান।

গত ২৬ মার্চ দুপুরের পর থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে তাণ্ডব চালাতে থাকে হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, ২নং পুলিশ ফাঁড়ি, সিভিল সার্জন কার্যালয়, সার্কিট হাউজ, সড়ক ও জনপথ ভবন, মৎস্য ভবন ও জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। 

পরদিন ২৭ মার্চ সদর উপজেলার নন্দনপুরে মোদি বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

এরপর ২৮ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের হরতাল চলাকালে দিনভর তাণ্ডব চালায় মোদি বিরোধী বিক্ষোভকারীরা। তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গণ, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তিনদিনের ওই তাণ্ডবে অন্তত ১১ জন নিহত হন।

তাণ্ডবের পর অনলাইনে-অফলাইনে অনেকেই পুলিশ সদস্যদের ব্যার্থতার কথা তুলে ধরেন। পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ কারণেই এত বড় তাণ্ডব হয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতিবিদ ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা।

জেলা নাগরিক ফোরামের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আতাউর রহমান শাহীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রেলওয়ে স্টেশন, পৌরসভা ভবন, ভূমি অফিস ও আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গণের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো অন্তত পুলিশ রক্ষা করতে পারত। তাদের সেই ক্ষমতা আছে। তবে পুলিশকে এ তাণ্ডবে নিষ্ক্রিয়তার দায়ভার নিতে হবে।

তবে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সঠিক নয় উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. রইছ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটা জায়গায় আমাদের পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। তারা সেখানে অ্যাকশনে গিয়েছে। বেশ কিছু ক্যাজুয়ালটি হয়েছে, পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকলেতো এগুলো হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। পুলিশ যথেষ্ঠ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বদলি সরকারি চাকরির একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। আমরা এখানে কেউ চিরস্থায়ী থাকার জন্য আসিনি। বদলির আদেশে কোনো কারণ লেখা হয়নি, সবগুলোই জনস্বার্থে। আজকে আমি আছি, কালকে তো আমার বদলি হতে পারে।

এমএএস