বরিশাল লঞ্চঘাট/ছবি: ঢাকা পোস্ট

ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের নদীবন্দরগুলোতে জনস্রোত নামত। করোনার কারণে লঞ্চ বন্ধ রাখায় এবার ঘাট ফাঁকা। শ্রমিকদের মাঝে নেই ঈদের আমেজ।‌ ‘ঈদের আগের দিন লঞ্চ চলাচলের অনুমতি মিলতে পারে’ শ্রমিকনেতাদের এমন আশ্বাস শুনে অপেক্ষায় থেকেছেন অনেকেই। বুধবার (১২ মে) রাতে শ্রমিকরা নিশ্চিত হলেন লঞ্চ চলবে না। তবে ঈদের পরদিন থেকে লঞ্চ চলাচলের অনুমতি না মিললে আন্দোলনে যাবেন শ্রমিকরা।

বৃহস্পতিবার (১৩ মে) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে এ কথা জানিয়েছেন নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশালের সভাপতি আবুল হাশেম।

তিনি বলেন, একে একে বাস, ফেরি সবই ছাড়া হলো। নদীপথের রাজা হয়ে গেছে ট্রলার-স্পিডবোট। লকডাউন শুধু লঞ্চে। অনেক লঞ্চশ্রমিকের ঘরে খাবার নেই। এক মাসেরও বেশি লঞ্চ চলাচল বন্ধ। কীভাবে দিন কাটাচ্ছি খোঁজ নেয় না কেউ। মালিকপক্ষ থেকে যা দেওয়া হচ্ছে তা অপ্রতুল। আমরা ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করব। পরদিন থেকে কঠোর আন্দোলনে নামব।

করোনার কারণে লঞ্চ বন্ধ রাখায় এবার ঘাট ফাঁকা, বরিশাল লঞ্চঘাট/ছবি: ঢাকা পোস্ট

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ৫ এপ্রিল থেকে সারা দেশের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। লঞ্চ না চললেও শ্রমিকদের রাতদিন দায়িত্ব পালন করতে হয়। যারা ছুটি নিয়েছেন তাদের বেতন দেননি লঞ্চমালিকরা; যারা ঈদে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের অর্ধেক বেতন দিয়েছেন।

শ্রমিকনেতারা বলছেন, নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তে ভুল আছে। দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ রেখে করোনা প্রতিরোধ নয় বরং ছড়ানোর সুযোগ দিয়েছেন।

সুরভী-৯ লঞ্চের মাস্টার শুক্কুর আলী বলেন, সব যানবাহনই চলছে। দূরপাল্লার বাসও চলে। মাইক্রোবাস, ট্রাক, মাহিন্দ্র ও সিএনজি চলছে। কম বেশি আয় হচ্ছে সবার। আমাদের বেলায় কেন এমন হলো? ঈদ মাটি হয়ে গেল। দ্রুত সময়ের মধ্যে লঞ্চ না ছাড়লে রাস্তায় নামব।

ইলিশা-ঢাকা চলাচলকারী দোয়েল পাখি লঞ্চের মাস্টার হোসেন আলী বলেন, অনেক কষ্টে ঈদ কাটছে। পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছুই কিনতে পারিনি। না পারছি কাজ করতে, না পাচ্ছি সহায়তা চাইতে। শুধু লঞ্চ বন্ধ রাখা হলো কেন বুঝতেই পারলাম না। অমানবিক সিদ্ধান্ত।

লঞ্চমালিকরা জানিয়েছেন, শ্রমিকদের তালিকা ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই ত্রাণ আসবে। মালিকরা সামর্থ্য অনুযায়ী বেতন ও সহায়তা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি লঞ্চমালিকরা। এখন দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ। শ্রমিকদের বেতন এবং ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা।

তিনি আরও বলেন, কিছু লঞ্চশ্রমিককে সীমিত আকারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমার জানা মতে অনেক লঞ্চমালিক অর্ধেক বেতন পরিশোধ করেছেন।

৫ এপ্রিল থেকে সারা দেশের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে, বরিশাল লঞ্চঘাট/ছবি: ঢাকা পোস্ট

বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, শুধুমাত্র লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। মনে হয় লঞ্চেই শুধু করোনা থাকে, আর কোথাও নেই। লঞ্চ বন্ধ রাখায় ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক সংকটের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। লঞ্চ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত যুক্তিহীন।ছেড়ে দিলে সংক্রমণ হ্রাস পেত। ​ফেরিঘাটের অবস্থা দেখেন। ওখানে একজন করোনা সংক্রমিত থাকলে বহু মানুষকে সংক্রমিত করবেন।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের প্রণোদনার জন্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আমাদের আশ্বস্ত করেছে; এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই।

এএম