মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের সব বিনোদনকেন্দ্র । ঈদের ছুটিতে অনেকেই পরিবারসহ বিনোদনের জন্য ছুটে যেতেন বিভিন্ন পার্কে। তবে এবার সব ধরনের বিনোদন পার্ক বন্ধ থাকায় ভিন্ন পথ অবলম্বন করছে মানুষ। সভারে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে বিভিন্ন নার্সারিতে ভিড় করেছে মানুষ।

শুক্রবার (১৪ মে) ঈদুল ফিতরের দিন বিকেলে সাভারের বিভিন্ন নার্সারি ঘুরে দেখা যায়, বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে অনেকেই ঘুরতে বের হয়েছেন। কেউ সেলফি তুলছেন, কেউবা দেখছেন গাছ কিংবা ফুলের সমাহার। কেউবা কর্মজীবন থেকে বেরিয়ে একটু প্রশান্তির শ্বাস নিতে এসেছেন এসব নার্সারিতে। যদিও ঘুরতে আসা অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মাস্ক ছাড়াই অনেক মানুষ এসব জায়গায় ঘোরাঘুরি করছে।

আশুলিয়ার হ্যাচারির মোড় এলাকার গ্রিনফিয়া নার্সারিতে ঘুরতে এসেছেন মনির হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন পর ছুটি পেয়েছি। আমরা মূলত ঈদ ছাড়া লম্বা ছুটি পাই না। তাই পরিবার নিয়ে বের হওয়ার সময়ই ঈদ। আগে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে গিয়েছি। এখন করোনার কারণে তো সব বন্ধ। তাই নার্সারিতেই ঘুরতে আসলাম। বিনোদন পার্ক খোলা থাকলে আরও ভালো লাগতো। 

স্বাস্থ্য বিধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম এখানে কেউ ঘুরতে আসবে না। তাই মাস্ক পরার প্রয়োজন মনে করিনি। কিন্তু এখানে এসে দেখি অনেক মানুষ ঘুরতে এসেছে। 

কাগড়া এলাকার বনায়ম নার্সারিতে পরিবারসহ ঘুরতে এসেছেন হানিফ। তিনি বলেন, আমরা আসলে বিনোদন পার্কের পাশাপাশি সবুজ শ্যামল এলাকায় ঘুরতে ভালবাসি। ছুটি পেলেই এসব জায়গায় আসি। এসব জায়গায় ভালো ফ্রেশ অক্সিজেন পাওয়া যায়। তাছাড়া সন্তানদের প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে গড়ে তুলতে নার্সারিসহ সবুজ বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করে দিতে হবে। মূলত এ কারণেই আসা। তাছাড়া বিনোদন কেন্দ্র খোলা থাকলে সেখানেও যেতাম। শিশুরা সেখানে একটু মন খুলে ছোটাছুটি করতে পারে। করোনার কারণে তো সব বন্ধ।

এদিকে গ্রিনফিয়া নার্সারির মালিক সুজন বলেন, লোকজন আসলে সামান্য ক্ষতি হয়। বাচ্চারা ফুল ছেড়ে, ডাল ভাঙ্গে। তবে আমরা কিছু বলি না। ঈদের দিন একটু ঘুরতে এসেছে, তাই আমরাও ছাড় দিচ্ছি। ঈদের তো লম্বা ছুটি। বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় তারা আমাদের এখানে এসেছে। তারা ছবি তুলছেন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে আমাদের প্রচারও হচ্ছে। বেচা-বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনাও আছে।

অপর নার্সারি বনায়মের মালিক আল-আমীন বলেন, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে মানুষ নার্সারিতে এসেছেন। এটা আমাদের আরও উৎফুল্ল করে। যদিও তাদের হাঁটাহাটিতে নার্সারির মাটি শক্ত হয়, ফুল ছেঁড়ে, গাছের ডাল ভাঙে তারপরেও আমাদের ভালো লাগে। আমাদের নার্সারিতে সৌন্দর্য আছে বলেই তারা আসেন। আমার নার্সারিতে শুধু ঈদে নয়, প্রতি শুক্রবারই অনেকে ঘুরতে আসেন। তাদের অনেকেই আবার গাছ কিনে নিয়ে যান। এতে আমাদের বিক্রিও হলো প্রচারও হলো। সামান্য ক্ষতি আমরা কিছুই মনে করছি না।

এদিকে সাভারের সর্ববৃহৎ বিনোদন পার্ক ফ্যান্টারি কিংডম ও নন্দন পার্কের প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা।  বিনোদন পার্কগুলো বিনোদনপ্রেমীর অভাবে ঈদেও মলিন হয়ে আছে। 

আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কিমটির থানা সভাপতি লায়ন ইমাম বলেন, গণজমায়েত এড়াতে বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বিনোদন কেন্দ্র ছাড়াও নার্সারিসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে গেলে বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখার উদ্দেশ্য অনর্থক হবে। তাই ঘর থেকে না বের হওয়ায় ভালো। ঘুরতে বের হলেও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব স্থানে যাওয়া উচিৎ।

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য  ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতেই বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব কেন্দ্র খোলা থাকলে করোনার সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে বিনোদন কেন্দ্র ছাড়াও মানুষ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, ফুল বাগান ও নার্সারিতে ঘুরতে যাচ্ছেন। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এসব জায়গাতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। 

আরএআর