ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ দিন শনিবার। রোববার (১৬ মে) থেকে ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে। তাই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ শেষে কর্মজীবী মানুষরা এখন রাজধানীমুখী।

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে ছুটছে মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও টার্মিনালগুলোতে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে।

শনিবার (১৫ মে) রাতে নওগাঁর ঢাকা বাস কাউন্টার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীমুখী মানুষের অপেক্ষাও ছিল চোখে পড়ার মতো। সরেজমিনে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস বন্ধ জেনেও ঈদের আগে শেষ মুহূর্তে বাড়ি ফিরেছিলেন অনেকেই। ছুটি শেষ আজ তাই তাৎক্ষণিক যে যেভাবে পারছেন সেভাবেই রওনা হচ্ছেন রাজধানীর দিকে।

নওগাঁ শাহ্ ফতেহ আলী বাস কাউন্টারে ঢাকা যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী স্বপন হাওলাদার। তিনি ঢাকার আজিমপুর এলাকায় থাকেন। গ্রামের বাড়ি সাপাহারে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে এসেছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন গ্রামে থাকেন। বছরে দুটি ঈদই সবার সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ হয়। গাড়ি বন্ধ, তারপরও যেভাবেই হোক ঢাকা যেতেই হবে। যারা যাওয়ার তারা তো যাবেই।

জানতে চাইলে বি আর সুপার পরিবহনের ম্যানেজার শরীফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, মালিকপক্ষের নির্দেশে গাড়ি বুক দেওয়া হয়েছে। টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১০০০ টাকা ৪০ সিটের গাড়িতে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি উপেক্ষা করে গাড়ি চালানোর অনুমতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাড়ির মালিকের নির্দেশে গাড়ি বুক দিয়েছি। আমরা মালিকের সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারী।

ভি আই পি পরিবহনের ড্রাইভার আবুল কালাম বলেন, আর কত জুলুম করা হবে মোটর শ্রমিকদের ওপর। শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সারাদেশে যে অফিস আদালত মার্কেট খোলা, সেখানে আক্রান্ত হচ্ছে না মানুষ? শুধু বাসে করোনার ঝুঁকি, মানুষ যে মাইক্রোতে গাদাগাদি করে যাচ্ছে, সেখানেও ঝুঁকি কম না বেশি? এভাবে আর কয়েকদিন বসে থাকলে পরিবার নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হবে।

বদলগাছি উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কামরুজ্জামান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। রোববার তাকে অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে। বাস বন্ধ, তবু টার্মিনালে লুকোচুরি করে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে ভিআইপি ট্যাভেলসে রাত ১০টার বাসে ঢাকায় যাচ্ছেন তিনি।

নাম বিহীন দূরপাল্লার একটি বাস রিজার্ভ বুক নিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। তারা বলেন, ঈদ করে মানুষের পকেটে টাকা শেষ। এই টার্মিনাল থেকে মাইক্রো ১৫০০ টাকা নিচ্ছে জনপ্রতি গাদাগাদি করে। সেখানে আমরা ১০০০ টাকায় একজন যাত্রী আরামে বসে ঢাকা যেতে পারছি ৫০০ টাকা কমে।

রিজার্ভ ওই গাড়িটির সুপারভাইজার রনি বলেন, দেড় মাস ধরে বেকার বসে আছি। পরিবার অনাহারে রয়েছে, তাদের জন্য ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে আবেদন স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হোক।

নওগাঁ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এসএম মতিউজ্জামান মতি ঢাকা পোস্টকে জানান, আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনা রয়েছে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকবে। আমাদের না জানিয়ে লুকোচুরি করে কেউ কেউ বাস বুকিং দিচ্ছে- এই কথাটি সঠিক নয়, কিছু কিছু মাইক্রো চলছে। 

এ বিষয়ে নওগাঁ মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, যেসব বাস নওগাঁ ছেড়ে যাচ্ছে, সেসব গাড়ি জেলা মোটর মালিক গ্রুপের কোনো সদস্যের নয়। ঈদের আগের রাতে যেসব বাস এসে নওগাঁয় আটকা পড়েছে, সেই সব ঢাকার মালিকদের গাড়িগুলো আমাদের না জানিয়ে লুকোচুরি করে যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছে। তবে মালিক গ্রুপ করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রেখেছে বলে জানান তিনি।

শামীনূর রহমান/এসএসএইচ