পার্বত্য জেলা রাঙামাটির সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা জুরাছড়ি। জুরাছড়িতে এমন একটি ইউনিয়ন রয়েছে যেখানকার জনগণ জানেন না ডিজিটাল সেবা কি। দুমদুম্যা ইউনিয়নের মানুষ এখনো মোবাইল নেটওয়ার্কের মতো নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। 

মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের ‘অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম’ এখানে আলোর মুখ দেখেনি। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার পাশাপাশি দুমদুম্যা ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব নাজুক। নেই কোন পাকা সড়ক, নেই বড় কোন গাড়ি চলাচলের রাস্তা। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে মোটরসাইকেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। বর্ষা মৌসুমে রাস্তা কর্দমাক্ত থাকায় এসব পথে গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধই থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিলাইছড়ি উপজেলা থেকে গবছড়ি, বরকলক, হাফফিলং বাজার পর্যন্ত জিপ গাড়ির মাধ্যমে আনা নেওয়া করেন। তবে বর্ষা মৌসুমে তা বন্ধ থাকে।

দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, বিলাইছড়ি উপজেলা থেকে যোগাযোগের পথ সুগম করতে জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নের গবছড়ি, বরকলক, ফকিরাছড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা দরকার। এতে অর্থনৈতিক পথ সুগম হবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নতির মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।

মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আমরা বিপদে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্যও মানুষকে ডাকতেও অনেক সময় লেগে যায়। আমরা পুরো বাংলাদেশ থেকে বিছিন্ন অবস্থায় আছি। আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন ১৫০ নং দুমদুম্যা মৌজা হেডম্যান থাংলিয়ানো পাংখোয়া।

দুমদুম্যা ইউনিয়নের বাসিন্দারা জুম চাষ করে জীাবিকা নির্বাহ করেন। সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ার পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাময় খীসা। তিনি বলেন, আমাদের দরকারের সময় আমরা কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। জুমের ফসল বিক্রি করার সময় যোগাযোগ করতে না পারার কারণে আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই।

জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, গত ৬ মে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা দুমদুম্যা ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডে যাই। ইউনিয়নটি এতটাই দুর্গম যে সেখানে যাতায়াত করা খুবই কষ্টসাধ্য। সেখানকার জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং যোগাযোগকে আরও সহজতর করতে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় দুমদুম্যা ইউনিয়ন অন্যান্য ইউনিয়ন থেকে সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে দুমদুম্যা ইউনিয়নে সেবাদানকে আরও সহজ করতে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

টগর রাজ মিশু মল্লিক/এসপি