নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কামতাল এলাকায় অবস্থিত টোটাল ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি রফতানিমুখী পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২০ মে) সকালে ঈদের ছুটির পর কারখানা খোলার সময় এ ঘটনা ঘটে। 

অভিযোগ উঠেছে, পোশাক কারখানার মালিকপক্ষের নির্দেশে বহিরাগতরা হামলা চালিয়ে অন্তত ২০ জন শ্রমিককে আহত করেছেন। 

এদিকে শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে বর্তমানে খুলনায় অবস্থানরত নিট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের জরুরি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল। 

শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে সব শ্রমিককে বেতন বোনাস দিয়ে ১২ জন শ্রমিককে বসিয়ে রাখা হয়। পরে মালিকপক্ষ তাদেরকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করে কারখানা থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে তাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকালে কারখানার সামনে মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নেন। এ নিয়ে কারখানার পক্ষ থেকে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন রাখা হয় এবং নিজস্ব সিকিউরিটি গার্ডের সংখ্যা বাড়ানো হয়। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে প্রবেশ করেন। 

শ্রমিকরা আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে স্থানীয় শ্রমিকদের জন্য একটি গেট এবং দূরবর্তী এলাকার শ্রমিকদের জন্য বিকল্প গেট রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুই গেটেই নজরদারি বাড়ানো হয়। সিকিউরিটি গার্ডের সদস্যরা পরিচয়পত্র চেক করে ভেতরে প্রবেশ করান। এতে স্থানীয় শ্রমিকদের গেটে দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়। এ সময় সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন সুইং সেকশনের ময়না নামে এক নারী শ্রমিক। সিকিউরিটি গার্ডের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে যান ওই নারী শ্রমিক। এতে তার মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। 

এ নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে স্থানীয় শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় দুইশ থেকে তিনশ শ্রমিক লোহার রড ও লাঠিসোটা নিয়ে গার্মেন্টসের ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালান। চাকরিচ্যুত ১২ শ্রমিককে পুনর্বহালসহ ১৭ দফা দাবিতে কারখানের ভেতরে অবস্থান নেন শ্রমিকরা।

এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) শেখ বিল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের সিনিয়র এএসপি জাহাঙ্গীর হোসেন, শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইফতেখার, বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার, বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা, কামতাল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. সুজন হক ও ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাসুম আহম্মেদ।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) শেখ বিল্লাহ জানান, স্থানীয় ১২ জন শ্রমিককে বিধি মোতাবেক ছাঁটাই করা হয়। এতে শ্রমিকরা এক জোট হয়ে ১৭ দফা দাবি উল্লেখ করে জেলা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দফতরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। শ্রমিকরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঈদুল ফিতরের আগে ওই কারখানার মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে শ্রমিকদের যত রকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে তা প্রদানের মাধ্যমে কারখানায় ঈদের ছুটি দেওয়া হয়। তবে একটি গ্রুপ কারখানার মোট ১৩শ শ্রমিকের মধ্যে আনুমানিক শতাধিক শ্রমিক নিয়ে ঈদ পরবর্তী কারখানা খোলার দিনই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মারধর করে, অফিসে ভাঙচুর করে এবং কারখানার মালামালের ব্যাপক ক্ষতি করে। যা কারখানার বিদ্যমান সিসি টিভি ফুটেজে দৃশ্যমান হয়েছে। 

রাজু আহমেদ/আরএআর