বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও তোফায়েল আহম্মেদসহ তৎকালীন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা সাংগঠনিক প্রয়োজনে জামালপুরে আসতেন। তখন তারা কয়েকটি বাড়িতে উঠতেন। এখানে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন, গোপন বৈঠক করতেন।

পাথালিয়ার আবদুল হাকিমের বাড়ি, দেওয়ান পাড়ায় সৈদালী মন্ডলের বাড়ি ও শাহপুরে ময়েন মিয়ার বাড়িগুলো ছিল তাদের পছন্দের। এই বাড়িগুলো যেমন বঙ্গবন্ধুর নিরাপদ আশ্রয়, রাজনৈতিক কার্যালয়, ও ভরসার স্থল ছিল, তেমনি বাড়ির মানুষগুলোর কাছে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আকাশের চাঁদ। এসব বাড়িতে থেকে তিনি জামালপুরের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নেন।

ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শী পাথালিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুজ্জামান সুরুজ আকন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল ওপরের তথ্যগুলো।

তিনি জানান, সে সময় আওয়ামী লীগ পরিচালিত হতো এই বাড়ি থেকে। আজও জেলাবাসীর কাছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই বাড়িগুলো। বদলেছে বাড়িরগুলোর কাঠামোও। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো আজও গর্বের সঙ্গে ধারণ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় বাড়িগুলো ও তার প্রজন্ম।

সেই সময়ের আওয়ামী লীগে আজকের মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হয়ে উঠতে পারেনি, এমনটা মন্তব্য করে সামছুজ্জামান বলেন, ইয়াহিয়া ও আইয়ুব খানদের মতো পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের বন্ধুকের নলের মুখে আন্দোলন-সংগ্রাম করা এতটা সহজ ছিল না। আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু দেশের আনাচকানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। প্রকৃত দেশবোধের কষ্টিপাথরে যাচাই করে তিনি নেতা নির্বাচন করেছেন।

সাংগঠনিক প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু একাধিকবার জামালপুরে এসেছেন। তিনি জামালপুরের মাটি ও মানুষের সঙ্গে খেয়েছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন। মিশেছেন এখানকার প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে।

বঙ্গবন্ধুর যাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছিল, তারা হলেন হায়দর হোসেন মল্লিক, মোকাদ্দেছ মিয়া, সৈদালী মন্ডল, কফিল মোক্তার, আইনজীবী আবদুল হাকিম, মজিদ আকন্দ, ময়েন মিয়া, দানেজ মিয়া, সোবহান উকিল, মতিয়র রহমান তালুকদার, রেজাউল করিম হীরাসহ আরও অনেকে।

তাদের অন্যতম ছিলেন আইনজীবী মরহুম আবদুল হাকিম। যিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে উকিল ছিলেন।

এ ছাড়া ১৯৭০-এ এমএনএ, ’৭৩-এ এমপিএ এবং ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু যখন বাকশাল কায়েম করেন, তখন আবদুল হাকিম জামালপুরের গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ১৯৬৬ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত জামালপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

তাই স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আজও এই বাড়ির মানুষগুলো তাদের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর বিচরণ, গমনাগমন, পদচারণ নিয়ে গর্ব করেন।

আকন্দ বাড়ির সন্তান, তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, স্বাধীন বাংলা ছাত্র পরিষদের সভাপতি, মুজিব বাহিনীর মহকুমা প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী ফজলুল বারী তারা (৬৫) স্মতিচারণা করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, জীবনে আমার আর কোনো অপ্রাপ্তি নেই। তিনি আমাদের বাড়িতে এসেছেন। তার সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছি, তার নির্দেশনায় রাজনীতি করেছি, তার আহ্বানে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি।

তিনি বলেন, আমার বাড়িতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির পদধূলি পড়েছে। বাঙালি হিসেবে আমি আজ ধন্য যে আমি বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছি।

এনএ