করোনা আক্রান্ত মাকে নিয়ে কাঁধে সিলিন্ডার বেঁধে হাসপাতালে যাওয়া ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার জিয়াউল হাসান টিটুকে সংবর্ধনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। শনিবার (২২ মে) বেলা ১১টায় নলছিটি উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুম্পা সিকদারের উদ্যোগে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

ইউএনওর সভাপতিত্বে নলছিটি উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জিয়াউল হাসান টিটু, তার ছোট ভাই রাকিবুল হাসান ইভান ও তার মা রেহানা পারভীন উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও রুম্পা সিকদার বলেন, মা এবং তার সন্তানকে নিয়ে করা অনুষ্ঠানটি আমার আট বছরের চাকরি জীবনের সেরা আয়োজন। এই আনন্দটুকু সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। টিটু ভাই ও তার মায়ের সুস্থতা কামনা করি।

টিটুর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়ার পর প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, টিটু তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যেভাবে মাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে সেটি একটি বিরল ঘটনা। আমরা টিটুকে সংবর্ধনা দিতে পেরে আনন্দিত।

উল্লেখ্য, হাসপাতালে ছয়দিন থাকার পর টিটু তার মাকে সুস্থ করে বাড়িতে নিয়ে এলে তখন ইউএনও তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। হাসপাতালে মায়ের সেবা করতে গিয়ে টিটু নিজেই পরবর্তীতে করোনায় আক্রান্ত হন। এতে সংবর্ধনার সিদ্ধান্তটি পিছিয়ে যায়।

টিটু গত ১৭ এপ্রিল শরীরের সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে করে করোনা আক্রান্ত মাকে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বাড়ি থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। 

সেদিন বিকেলে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক থেকে তোলা মা-ছেলের হাসপাতালে যাওয়ার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ঢাকাপোস্টসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হয়।

ওই ছবিতে দেখা গেছে, একজন মোটরসাইকেলচালক একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে মায়ের মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দ্রুতগতিতে হাসপাতালের দিকে ছুটছেন। সঙ্গে আরেকটি মোটরসাইকেলে ছিলেন আরও দুইজন আরোহী।

টিটুর মা রেহানা পারভীন তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, শিক্ষকতা জীবনে শিক্ষার্থীদের যে উপদেশ দিয়েছি সেই সেবাগুলোই এখন সন্তানদের কাছ থেকে পাচ্ছি। সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ।

টিটু বলেন, সন্তান মায়ের জন্য করবে এটাই স্বাভাবিক। এতে সংবর্ধনা পাওয়ার কিছু নেই। তারপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্যারসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে ফোন দিয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। 

সাংবাদিক মিলন কান্তি দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঝালকাঠি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আল-আমিন তালুকদার, ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সহসম্পাদক কেএম সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইসমাঈল হোসাঈন /এসপি/আরএআর